ভাসানীকে ম্যানেজ করতে বঙ্গবন্ধুর কৌশল
গােয়েন্দা প্রতিবেদনে অনেক সময় ভাসানীকে, ভাসানীর মাওলানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবদুল হামিদ খান আসামের ভাসানীর চরে গরিবদেরও নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পূর্ববঙ্গে আসার পর থেকে আবদুল হামিদ খানের সাথে ভাসানী শব্দটি যুক্ত হয় এবং পরে শুধু মওলানা ভাসানী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। গত শতকের ষাটের দশকে বামপন্থিরা তার উপাধি দেন মজলুম জননেতা। ভাসানীও মুসলীম লীগে ছিলেন এবং ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন। শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন তার অন্যতম সহচর। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করার পরও মুজিবের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক মােটামটি অটুট ছিল। রাজনীতিতে তিনি স্থির ছিলেন না, পরস্পর বিরােধী মত ও নীতি ধারণ করেছেন। যতদিন তিনি আওয়ামী লীগে ছিলেন বঙ্গবন্ধু তাঁর নির্দেশে কাজ করে গেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি চরমভাবে বঙ্গবন্ধুর বিরােধিতা করেন কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাঁর সম্পর্কে নিশ্চুপই ছিলেন। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী তখনকার একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন তৎকালীন উপসচিব ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর।
একদিন তিনি গেছেন গণভবনে। তার কক্ষে ঢুকে দেখেন তিনি গােয়েন্দা প্রধানের ব্রিফিং শুনছেন। ড. আলমগীর যখন বেরিয়ে যাচ্ছেন তখন বঙ্গবন্ধু তাঁকে বললেন, ‘বােস ঐখানে’। গােয়েন্দা প্রধান তাঁকে ভাসানী সম্পর্কে ব্রিফিং করেছিলেন যার মূলকথা হলাে, ভাসানী সন্তোষে মিটিং এর পর মিটিং করে যাচ্ছেন এবং চরমভাবে সরকার বিরােধী কিছু করার জন্য তৎপর। এ ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে? গ্রেফতার বা অন্যকিছু?
বঙ্গবন্ধু মন দিয়ে শুনলেন। তারপর হঠাৎ ডেকে পাঠালেন একজনকে, জিজ্ঞেস করলেন, সিলেটের কমলা উঠেছে কি না! তিনি জানালেন উঠেছে। বঙ্গবন্ধু তাঁকে নির্দেশ দিলেন, মওলানা সাহেবকে সন্তোষে (তাঁর বাড়িতে) এক ঝুড়ি কমলা পাঠাতে। নির্দেশ পেয়ে কর্মকর্তা যখন চলে যাচ্ছেন তখন ফের তাকে ডেকে বললেন, ঢাকার কোনাে এক দোকান থেকে কয়েক পাতিল মিষ্টিও পাঠিয়ে দিতে।
গােয়েন্দা প্রধান তখনও নির্দেশের অপেক্ষায়।
বঙ্গবন্ধু পাইপ ঠুকে তামাক বের করছেন।
গােয়েন্দা প্রধান আবারাে বললেন, ‘স্যার আপনার নির্দেশ দরকার।’
বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘নির্দেশতাে দিলাম’, ‘বুঝলা না?’
গােয়েন্দা প্রধান মাথা নাড়লেন।
‘শােন’, বললেন বঙ্গবন্ধু, ‘মওলানা ভাসানীকে গ্রেফতার করার জন্য শেখ মুজিব বাংলাদেশ করে নাই।’
:::::::::::::::
References:
তৎকালীন উপসচিব ড মহিউদ্দিন খান আলমগীর
বঙ্গবন্ধুর জীবন ছাত্র রাজনীতি থেকে জাতীয় রাজনীতি ১৯২০-১৯৪৯, মুনতাসীর মামুন, pp 52-53
সংগ্রামের নোটবুক
www.songramernotebook.com