মুজিবের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধাঃ
আমার মনে আছে খুবই গরিব এক বৃদ্ধ মহিলা কয়েক ঘন্টা রাস্থায় দাঁড়িয়ে আছে শুনেছে এই পথে আমি যাব, আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বলল, ‘’বাবা আমার এই কুঁড়েঘরে তোমায় একটু খানি বসতে হবে।‘’ আমি তাঁর হাত ধরেই তাঁর বাড়িতে যাই। অনেক লোক আমার সাথে, আমাকে মাঠিতে একটা পাটি বিছিয়ে বসতে দিয়ে এক বাটি দুধ, একটা পান ও চার আনা পয়সা এনে আমার সামনে ধরে বলল, “খাও বাবা, আর পয়সা কয়টা তুমি নেও, আমারতো কিছুই নাই।” আমার চোখে পানি এল। আমি দুধ একটু মুখে নিয়ে সেই পয়সার সাথে আরোও কিছু টাকা তাঁহাতে দিয়ে বললাম, “তোমার দোয়া আমার জন্য যথেষ্ট, তোমার দোয়ার মূল্য টাকা দিয়ে শোধ করা যায়না।” টাকা সে নিল না, আমার মাথায় মুখে হাত দিয়ে বলল, “গরিবের দোয়া তোমার জন্য আছে বাবা।” নিরবে আমার চক্ষু দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়ীয়ে পড়েছিল, যখন তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি সেদিনই আমি মনেমনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ‘’মানুষরে আমি ধোঁকা দিতে পারবনা।” এরকম আরও অনেক ঘটনা ঘটেছিল। আমি পায়ে হেঁটেই এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে যেতাম। আমাকে রাস্থায় রাস্তায় । গ্রামে গ্রামে দেরি করতে হত। গ্রামের মেয়েরা আমাকে দেখতে চায়। আমি ইলেকশনে নামার পূর্বেই জানতাম না, এ দেশের লোক আমাকে কত ভালোবাসে। আমার মনের একটা বিরাট পরিবর্তন এই সময় হয়েছিল।
Ref: অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান