You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাকিস্তানের উপর সারা বিশ্বের চাপ সৃষ্টি করা উচিত
বাঙলাদেশের রাজনৈতিক সমাধান প্রসঙ্গে ওলন্দাজ প্রতিনিধিদের মন্তব্য

কলকাতা, ৪ সেপ্টেম্বর (ইউ এন আই) ওলন্দাজ পার্লামেন্টের দুইজন বিশিষ্ট সদস্য আজ এখানে বলেন, “পূর্ববঙ্গের জনসাধারণের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানে যাতে পাকিস্তান বাধ্য হয় সেজন্য “অর্থনৈতিক সাহায্যসহ সবরকম হাতিয়ার প্রয়ােগ করে পাকিস্তানের উপরে সারা পৃথিবীর চাপ সৃষ্টি করা উচিত”। ওলন্দাজ কোয়ালিশন সরকারের অন্যতম শরিকদল ক্যাথলিক পপলস পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য মিঃ পি এ এস করনেলিসেন এবং বিরােধী লেবার পার্টির এম পি মিঃ এ জেড তেরবীক বলেন যে, বাঙলাদেশ প্রশ্ন পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন বিষয় বলে পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে যে দাবি করা হচ্ছে, তা গ্রহণ যােগ্য নয়। ভারতের লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর উপস্থিতি এবং শান্তির পক্ষে যে বিপদ উস্থিতি হয়েছে, তার ফলে বাঙলাদেশ প্রশ্নটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হয়ে উঠেছে এবং পৃথিবীর দেশগুলির এটা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে যে, “পূর্ব বাঙলার মানুষের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাঙলাদেশ সমস্যা সমাধান হয়। তারা বলেন, শেখ মুজিবর রহমানের বিচারের ব্যাপারে ওলন্দাজ সরকার তাদের উদ্বেগের কথা পাক সরকারকে জানিয়েছেন।” শেখ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন এবং তার কারান্তরালে না থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত ছিল।” তাঁরা বলেন, শেখ এর প্রতি যতদিন অপরাধী হিসেবে আচরণ করা হবে, ততদিন পর্যন্ত সমস্যার কোনও সমাধান হতে পারে না। আওয়ামী লীগ অসদুপায়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বলে পাকিস্তানী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঘােষণা করেছেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, এই অভিযােগের কোনও ত এই কারণে যে, খােদ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছিলেন এবং এমন কি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলােচনা পর্যন্ত শুরু করেছিলেন।
তারা জানান এই মাসের শেষদিকে তাদের পাকিস্তান সফর করলে তারা জেনারেল ইয়াহিয়া খানের দৃষ্টি এই ঘটনার প্রতি আকর্ষণ করবেন। ডঃ এস এ মালিককে পূর্ববঙ্গের গর্ভনর নিযুক্ত করার ব্যাপারে তারা বলেন, মিঃ মালিক জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন। মিঃ তেরবীক আরাে বলেন, এটা হলাে, জনসাধারণের পরামর্শ না নিয়ে ‘টিপিক্যাল ঔপনিবেশিক কায়দায় কর্তা নিয়ােগ। শরণার্থীদের কাছ থেকে তারা যা শুনেছেন, তাতে বাঙলাদেশের ঘটনাকে জাতিসংঘের মানবিক অধিকার সংক্রান্ত সনদ লজ্জন বলে তারা মনে করেন এবং তারা চান বিষয়টি জাতিসংঘে আললাচিত হােক। আন্তর্জাতিক ক্ষমতায় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, নেদারল্যান্ডের মত সেই সব ছােট ছােট দেশ নিঃসন্দেহে প্রশ্নটির রাজনৈতিক সমাধান দাবি করবে যদি বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে মিঃ তেরবীক বলেন, শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তার ধারণা হয়েছে যে, বাঙলাদেশে গণহত্যা হয়েছে। মিঃ কর্ণোলিমেজ অবশ্য বাঙলাদেশ সফর করার ও পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার আগে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। পাকিস্তান কনসার্টিয়ন যাতে পাকিস্তানকে আবার সাহায্য দেওয়া শুরু করে তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্যোগ নিলে ওলন্দাজ সরকার কি করবে প্রশ্ন করা হলে মিঃ কর্ণোলিমেজ বলেন, বাঙলাদেশের জনগণের সঙ্গে আলােচনার মধ্য দিয়ে যতক্ষণ না পাকিস্তান সরকার একটা মীমাংসায় উপনীত হচ্ছে, ততক্ষণ তার সরকার ঐ ধরনের কোনও ধরনের উদ্যোগের বিরােধিতা করবে। তিনি মনে করেন, কনসার্টিয়মে নেদারল্যান্ডের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিমত থাকবে। তিনি মনে করেন যে, সারা পৃথিবীর এই শরণার্থীদের বােঝা বহন করার জন্য এগিয়ে আসা উচিত। দরিদ্র ভারতকে যে শতকরা ১০ ভাগ বােঝ বহন করতে হচ্ছে এটা বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে একটা লজ্জার কথা, ওলন্দাজ সরকার ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সাহায্যার্থে ৬০ লক্ষ ডলার মঞ্জুর করেছেন।

সূত্র: কালান্তর, ৫.৯.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!