You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.22 | অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস | জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা | স্বাধীন দেশের নতুন পতাকার পরিচিতি - সংগ্রামের নোটবুক

২২ মার্চ ১৯৭১ঃ আজকের এদিনে

অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস

অসহযোগ আন্দোলনের আজ ছিল ২১তম দিবস। এদিন ছিল সর্বাধিক মিছিল সমাবেশ শোভাযাত্রার দিন। এদের মধ্যে আবার সর্বাধিক শোভাযাত্রা ছিল মিরপুর রোডে আর সেই সকল শোভাযাত্রার গন্তব্য ছিল শেখ মুজিবের বাসভবন

ছাত্রলীগ লালবাগের চৌধুরী বাজারে সমাবেশ করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন লালবাগ আঞ্চলিক ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ মশাররফ হোসেন। সভায় বক্তব্য প্রদান করেন ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী, আবুল কুদ্দুছ মাখন, শেখ শহিদুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক এমএ রশিদ, প্রচার সম্পাদক তাজুল ইসলাম, মোঃ শাহজাহান। ছাত্রলীগ সভাপতি তার ভাষণে বলেন স্বাধীনতার প্রশ্নে তারা কোন বাধা মানবেন না। তিনি বলেন গণআন্দোলনের উত্তাল তরঙ্গের মুখে নির্যাতনের ব্যারিকেড দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন ব্যার্থ করা যায় না। শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন বাংলার মুক্তি আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতিটি নরনারীকে জীবনের মূল্য হলেও লড়াই করে যেতে হবে। আব্দুল কুদ্দুছ মাখন বলেন বাংলার এই স্বাধীনতা সংগ্রামকে ধরে রাখার জন্য সু শৃঙ্খল ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

স্বাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ আজ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী পণ্য বর্জন আন্দোলন শুরু করেছে। পরিষদ অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার আহবান জানিয়েছে। পরিষদ বাংলাদেশের কোটি মানুষের সংগ্রামে সাহায্য করার জন্য আইএলও এর প্রতি আহবান জানিয়েছে। যে সকল রাষ্ট্র পাকিস্তানে অস্র সরবরাহ করে তাদের এসকল অস্র যাতে বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে ব্যাবহার না করা হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য পরিষদ দেশ গুলির প্রতি আহবান জানান।

সকালে স্কুল ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং ওয়াপদা কর্মচারীদের এক যৌথ মিছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সময়ে হোটেলের সেনাবাহিনীর টহল সতর্ক অবস্থান নেয়। এখানে মিছিলকারীরা জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্রতি জুতা প্রদর্শন করে। মিছিলটি প্রেসিডেন্ট ভবনের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। অপর একটি মিছিলে ভুট্টোর কুশপুত্তলিকা তীরবিদ্ধ করা হয়।

শহীদ মিনারে কেন্দ্রীয় কচিকাচার আসর নীল টুপী পরে সমাবেশ করে। সমাবেশে তারা শপথ গ্রহন করে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে। এদের সমাবেশে রোকনুজ্জামান দাদা ভাই শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদিন, ইফতখার উদ্দিন বক্তব্য দেন।

বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে শিশুকিশোরদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে শিশুকিশোররা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে

খৃস্টান পরিষদ শেখ মুজিবের আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল বের করে। অবশিষ্ট ব্যাঙ্ক গুলির কর্মচারী পরিষদ আজ মিছিল শোভাযাত্রা করে।

সিএ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে।

পাক মটর মহিলা সংগ্রাম কমিটি মেজর জেনারেল আইএ মজিদের নেতৃত্ব গণবাহিনী গঠনের জন্য সৈনিকদের প্রতি আবেদন জানান।
গভীর রাত পর্যন্ত শহরে মিছিল চলে।

স্বাধীন দেশের নতুন পতাকার পরিচিতি

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জাতীয় পতাকার নমুনা জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক এবং পিপল সহ আরও কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ২৩ মার্চ পতাকার বহুল ব্যবহার নিশ্চিত করতেই পতাকার পরিচিতি বিষয়ক সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিক সমাবেশ

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে প্রাক্তন বাঙালি সামরিক অফিসার জোয়ানদের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মেজর জেনারেল (অঃ) এম আই মজিদ এবং সমাবেশটি পরিচালনা করেন কর্নেল ওসমানী। শপথ গ্রহণ করে অন্য অফিসার জোয়ানদের কর্মস্থল ত্যাগ করে যুদ্ধে যোগদানের আহবান যানানো হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলার নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে তাতে প্রক্তন সৈনিকরা আর প্রাক্তন হিসেবে বসে থাকতে পারে না। তারা সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মসূচী সফল করার জন্য শপথ নেন। সমাবেশে কর্নেল অবঃ এম ওসমানী এমএনএ বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে শহীদ মিনার হয়ে সবাই শেখ মুজিবের বাড়িতে যান। শেখ মুজিবের বাসভবনে তারা চারজন শেখ মুজিবের সাথে একান্ত বৈঠক করেন। মেজর জেনারেল (অঃ) এম আই মজিদ / কর্নেল অঃ ওসমানী সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে শেখ মুজিবের হাতে একখানা তরবারী তুলে দেন। (মতান্তরে ২৪ তারিখ মেজর জেনারেল (অঃ) এম আই মজিদ শেখ মুজিবের সাথে দেখা করে হাতে একখানা তরবারী তুলে দেন।)
নোটঃ মেজর জেনারেল (অঃ) এম আই মজিদ পূর্ব পাকিস্তানের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন না। তিনি অবসরের পর ৬২ সালের দিকে ফতুল্লা গ্রামে স্থায়ী হন। তিনি বয়স্ক ছিলেন এবং পালানোর আগেই গ্রেফতার হয়ে যান। তাই তার পরিবর্তে ওসমানী বাহিনী প্রধান হিসেবে উপযুক্ত ছিলেন।

জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সকালে ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনাক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন বিষয়ে খুব শীঘ্র প্রেসিডেন্ট জাতির উদ্দেশে বেতার ভাষণ দিবেন। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ দলের নেতা জানিয়েছেন অধিবেশন স্থগিত করার বিষয়ে তাদের সাথে কোন পরামর্শ করা হয়নি। ঘোষণাটি এমন সময় প্রচার করা হয় যখন ইয়াহিয়া মুজিব এবং ভুট্টো আলোচনারত ছিলেন