২২ মার্চ ১৯৭১ঃ প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ফিরে জুলফিকার আলী ভুট্টো
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রাত নয়টায় সাংবাদিক সম্মেলনে ভুট্টো বলেছেন রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন করে সমঝোতা ও ঐক্যমতে পৌছানোর জন্য সংশ্লিষ্ট শিবির সমুহ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন এবং এ প্রয়াস ভণ্ডুল করার জন্য কোন পক্ষই ভেটো প্রয়োগ করবে না। তিনি বলেন শেখ মুজিব এবং ইয়াহিয়া ঐক্যমতে পৌছেছেন (প্রকৃতপক্ষে আলোচনা ভণ্ডুল হয়ে গেছে এবং পরদিন সকালেই পরিষদের অধিবেশন আবারও স্থগিত করা হয়) আলাপ আলোচনার জন্য বিষয়টি উৎসাহজনক এবং ভিত্তি বলা যায়। তিনি বলেন তার দল আলোচনাকালে কোন নিজস্ব ফর্মুলা দিবে না। তার দল মুজিব ইয়াহিয়ার ফর্মুলাকে নিয়েই তাদের চাওয়া পাওয়ার হিসেব নিকেশ করবে। শেখ মুজিবের ৪ দফার বিষয়ে তিনি বলেন এর চাইতে আরও বেশী কিছু দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। তিনি আবারো জোর দিয়ে বলেন পরিষদের অধিবেশন বসার আগে তার দল আওয়ামী লীগ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আবশ্যকতা আছে। তিনি বলেন বর্তমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীও একটা পক্ষ এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
এর আগে তিনি হোটেলে আসার সাথে সাথে সাংবাদিকরা তার সাথে কথা বলতে ব্যর্থ হন। সেনাবাহিনীর লোকজন ১১ তলা থেকে তাদের সরিয়ে দেন। ইয়াহিয়ার সাথে আলাদা ভাবে ভুট্টোর পাচ উপদেষ্টা বৈঠক করেন। ভুট্টো হোটেলে তাদের খোজ করে আবার ঘরোয়া বৈঠক করেন।
২২ মার্চ ১৯৭১ঃ পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের তৎপরতা
ইয়াহিয়ার আমন্ত্রনে কাইউম মুসলিম লীগের সভাপতি খান আব্দুল কাইউম খান ঢাকার পথে করাচী রওয়ানা হয়েছেন। জমিয়তে উলামা পাকিস্তান নেতা শাহ আহমেদ নুরানীও আজ ঢাকা পৌছবেন।
আওয়ামী লীগকে সমর্থনকারী ৪ নেতা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মিয়া মমতাজ দৌলতানার কক্ষে বৈঠক করেন। এই ৪ নেতা ইয়াহিয়ার সাথেও দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন। মিয়া মমতাজ দৌলতানা পিডিপি প্রাদেশিক প্রধান নুরুল আমীনের সাথেও বৈঠক করেন।
জাতীয় পরিষদ স্থগিত ঘোষণা করার পূর্বে নেতাদের সাথে আলোচনা করেছেন বলে ইয়াহিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন এই ৪ নেতা তাদের সাথে আলোচনার কথা অস্বীকার করেছেন।
২২ মার্চ ১৯৭১ঃ মুফতি মাহমুদ, গাউস বক্স বেজেনজো, ওয়ালী খানের বিবৃতি
মুফতি মাহমুদ, গাউস বক্স বেজেনজো, ওয়ালী খান ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেছেন সংখ্যাগরিষ্ঠদের শাসনকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে জাতীয় পরিষদকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জুলফিকার আলী ভুট্টো যদি এক প্রদেশ ভিত্তিক হওয়ার কারনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের সামগ্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানতে রাজী না হন তাহা হলে যে ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের আর অখণ্ড অস্তিত্ব নেই। সে ক্ষেত্রে পাঞ্জাব এবং সিন্ধুতে অপেক্ষাকৃত কম আসন লাভ করে কিভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের সকল প্রদেশের পক্ষে কথা বলার অধিকার দাবী করতে পারেন। নিজের যুক্তিতেই তিনি বেলুচিস্তানের কোন প্রশ্নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন না কারন উক্ত প্রদেশে জাতীয় বা প্রাদেশিক পরিষদের কোনটাতেই তার দল একটি আসন লাভ করতে পারেনি। অনুরূপ ভাবে সীমান্ত প্রদেশ বা উপজাতীয় এলাকার কোন সমস্যার ব্যাপারেও তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন না। এ দুটি এলাকায় তার দল যথাক্রমে একটি এবং তিনটি আসন লাভ করেছে। তারা অভিযোগ করেন দু অংশে পৃথক পৃথক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরকার আবারও এক ইউনিট প্রথা চালু করতে চাচ্ছে। তারা কোন অবস্থায় আর এক ইউনিট মেনে নিবেন না।