রক্ষীবাহিনী গঠনের আইনগত ভিত্তি ছিলো কিনা?
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তালিকাভুক্ত এবং তালিকাবহির্ভূত গণবাহিনীর সব সদস্যকে সুষ্ঠুভাবে সংগঠিত করার জন্য জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠিত হবে। জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে দেশের এই তরুণ সমাজের অভূতপূর্ব উৎসাহ-উদ্দীপনা সঠিকভাবে কাজে লাগানাের জন্যই এই কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে প্রতিটি জেলা ও মহকুমায় একটি করে মিলিশিয়া ক্যাম্প খোলা হয়েছে, যেখানে মুক্তিবাহিনীর সব অস্ত্র জমা দিতে হবে। জাতীয় মিলিশিয়া কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশের তরুণ সমাজ মাতৃভূমির সেবা করার বিরাট সুযােগ পাবে। জাতীয় মিলিশিয়া হবে জনশক্তির আধার, যেখান থেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলাে বিভিন্ন সংস্থায় মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ােগ করতে পারবে। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই আঁচ করা গেল, তরুণদের মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি, তারা একটু অসন্তুষ্ট। কারণ, চাকরির ক্ষেত্রে শুধু মুক্তিযােদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলে তাদের সুযােগ কিছুটা হলেও সীমিত হয়ে পড়বে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এর অব্যবহিত পরই মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের কীভাবে যুদ্ধবিধ্বস্তু স্বাধীন দেশটির পুনর্গঠনের কাজে লাগানাে যায়, তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার চিন্তাভাবনা করেছিল। কারণ, মুক্তিযােদ্ধাদের অসীম সাহস, আত্মত্যাগী মনােভাব ও অসাধারণ দেশপ্রেমকে সরকার কাজে লাগাতে চেয়েছিল। ১৮ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের জাতীয় মিলিশিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের পেছনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয় দফা ও ছাত্রসমাজের এগারাে দফা দাবির বিষয়টি ছিল । ছয় দফার ৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছিল, “আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জনা শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কতৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হইবে।” অন্যদিকে ছাত্রসমাজের এগারাে দফার ৩ নম্বর দফার ‘চ’ উপদফায় ছিল, ‘পূর্ব-পাকিস্তানকে মিলিশিয়া বা প্যারা মিলিটারি রক্ষীবাহিনী গঠনের ক্ষমতা দিতে হইবে । পূর্ব-পাকিস্তানে অস্ত্র কারখানা নির্মাণ ও নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন করিতে হইবে।’ এমনকি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের একুশ দফার ১৯ নম্বর দফায়ও বিষয়টি প্রচ্ছন্নভাবে ছিল।
জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠনের কথা ছিল উপরিউক্ত সব দফায়। যদিও দফাগুলাে ছিল তৎকালীন পাকিস্তানে পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে । কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযােদ্ধাদের কাজে লাগানাের জন্যও একটি মিলিশিয়া বাহিনী বা অন্য কোনাে বাহিনী গঠন করার প্রয়ােজন ছিল। মুক্তিযােদ্ধাদের মধ্যে আত্মত্যাগী মনােভাব ও দেশপ্রেম ছিল, কিন্তু তাদের সবার সেনাবাহিনী অথবা অন্য কোনাে নিয়মিত বাহিনীতে যােগ দেওয়ার মতাে শারীরিক বা অন্যান্য যােগ্যতা ছিল না।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর নিরাপত্তাজনিত ও অন্যান্য কারণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের তখনই ঢাকায় আসা সম্ভব হয়নি। তবে সরকারের অগ্রবর্তী দল ১৭ ডিসেম্বরই ঢাকায় এসে প্রশাসনিক কাজ শুরু করে! ২২ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকে ঢাকায় ফেরেন ! ২৩ ডিসেম্বর ঢাকায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ১৮ ডিসেম্বরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতীয় মিলিশিয়া’ বাের্ড১ গঠন করা হয়।
১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে সভাপতি করে জাতীয় মিলিশিয়ার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বাের্ডের সদস্যদের নাম ঘােষণা করা হয়। সদসারা হলেন : ১. মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (সভাপতি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ন্যাপ ভাসানী), ২. এ এইচ এম কামারুজ্জামান (তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), ৩. মনােরঞ্জন ধর (এমএনএ; আওয়ামী লীগ), ৪. মণি সিংহ (সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি), ৫. অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ (সভাপতি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ন্যাপ মােজাফফর), ৬. গাজী গােলাম মােস্তফা (এমপিএ২; আওয়ামী লীগ), ৭. রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া (এমপিএ, আওয়ামী লীগ), ৮. তােফায়েল আহমেদ (এমএনএ৩; আওয়ামী লীগ), ৯, আব্দুর রাজ্জাক (এমপি, আওয়ামী লীগ) ও ১০. ক্যাপ্টেন সুজাত আলী (এমপিএ; আওয়ামী লীগ)। সরকার, আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এই বাের্ডের সদস্য ছিলেন।
১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে জাতীয় মিলিশিয়া বাের্ডের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় । তাজউদ্দীন আহমদ সভায় বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও দলমত-নির্বিশেষে যারা দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনীতে নেওয়া হবে। সরকার তাদের আহার, বাসস্থান এবং ন্যূনতম বেতনের ব্যবস্থা করবেন। …জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনীতে তালিকাভুক্তির পর প্রত্যেককে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থান এবং ব্যক্তিগত পেশায় ফিরে যাওয়ার সুযােগ দেওয়া হবে।৪
এই সময় অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ২ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ফরমেশন৫ কমান্ডারদের এক সভা সেনাসদরে অনুষ্ঠিত হয়। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান কর্নেল মুহাম্মদ আতাউল গনি (এম এ জি) ওসমানী৬ সভায় সভাপতি করে। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ও ফোর্স কমাল্ডাররাসহ তিন বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় মুক্তিযােদ্ধাদের নিয়ে জাতীয় মিলিশিয়া গঠনে সরকারের প্রস্তাবের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানাে হয়। এ ব্যাপারে সরকারকে প্রয়ােজনীয় সব সহযােগিতা করার জন্য ফরমেশন কমান্ডার একটি কমিটি৭ গঠন করেন । উইং কমান্ডার এম কে বাশার৮, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সি আর দত্ত৯, লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডি কে দাস১০, লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নূরুজ্জামান১১, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ মঞ্জুর১২ ও মেজর রফিকুল ইসলামকে১৩ ওই কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরেন। ১২ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর কয়েক দিন পর বাংলাদেশ সরকার চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, মুক্তিযােদ্ধাদের দেশ গঠনে কাজে লাগানাের জনা জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে । ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি এই মর্মে সরকার একটি প্রেসনােট১৪ জারি করে। প্রেসনােটে বলা হয় :
১. অনতিবিলম্বে একটি জাতীয় মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হইবে এবং তালিকাভুক্ত হউক বা না হউক, সমস্ত মুক্তিযােদ্ধাকে তাহার আওতায় আনা হইবে।
২. প্রত্যেক মহকুমায় সেই এলাকার গেরিলা বাহিনীর জন্য শিবির প্রতিষ্ঠা করা হইবে। শিবিরগুলাের পরিচালনা ব্যবস্থা এমনভাবে করা হবে যেন এইসব যুবককে পুনর্গঠন কাজের উপযােগী করিয়া প্রয়ােজনীয় ট্রেনিং দেওয়া সম্ভবপর হয়।
৩. মহকুমাভিত্তিক শিবিরগুলাে সেই এলাকার সমস্ত গেরিলা বাহিনীর মিলনকেন্দ্র হইবে।
৪. উর্ধ্বপক্ষে এগারােজন সদস্য লইয়া জাতীয় মিলিশিয়ার জন্য একটি কেন্দ্রীয় বাের্ড গঠন করা হইবে। বাের্ডের সদস্যগণকে সরকার মনােনয়ন দান করিবেন।
৫. প্রত্যেক মহকুমা শহরে জাতীয় মিলিশিয়ার জন্য মহকুমা বাের্ড থাকিবে। মহকুমা বাের্ডের সদসংখ্যা অনধিক এগারােজন হইবে। সদস্যগণ সরকার কর্তৃক মনােনীত হইবেন।
৬. প্রতিটি শিবিরে অস্ত্রশস্ত্র কার্যোপযােগী অবস্থায় রাখা, গুদামজাত করা ও হিসাবপত্র রাখার জন্য একটি করিয়া অস্ত্রাগার থাকিবে।
৭. ট্রেনিং-এর কার্যসূচি এমন ভাবে হস্তান্তর করা হইবে যেন এইসব যুবককে নিম্নে বর্ণিত ভূমিকা পালনের উপযােগী করিয়া তোলা যায়-
ক. যেন ভঁহারা দেবের দ্বিতীয় রক্ষাবাহু হইতে পারেন।
খ. যখনই নির্দিষ্টভাবে প্রয়ােজন হইবে তখনই যেন তাহারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও পুনর্বহালে উপযােগী হইতে পারেন ।
গ. দেশের পুনর্গঠনকার্যে সরকারি সহায়তা হয় এমন বিভিন্ন কাজের উপযােগী হন।
৮. অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান, অপুষ্টিকর খাদ্য এবং অপর্যাপ্ত বেতন ও ভাতার অনা যুক্তিযুদ্ধের সময় এই গেরিলাদের এক বিরাট অংশ কষ্টভােগ করিয়াছেন। সে জন্যই তাহাদের খাদ্য, বাসস্থান ও ভাতার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হইবে।
সে দিন অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টাঙ্গাইলের মুক্তিবাহিনীর১৫ অস্ত্র গ্রহণের জন্য টাঙ্গাইল সফরে যান। স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ এবং বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফেরার পর ঢাকার বাইরে এটাই ছিল তাঁর প্রথম সফর। তিনি মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের মুক্তিযােদ্ধাদের অসীম সাহসিকতা ও টাঙ্গাইলের মুক্ত এলাকায় মুজিবনগর সরকারের প্রশাসন কার্যকর রাখার সাফল্যের স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিলেন। তবে সরকারের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন নানা কারণে তার এই সফরের বিরােধিতা করেছিলেন।
টাঙ্গাইলে অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযােদ্ধাদের উদ্দেশে ভাষণ। দেন তিনি বলেন, “আমি তােমাদের তিন বছর কিছু দিতে পারব না।
আরও তিন বছর যুদ্ধ চললে তােমরা যুদ্ধ করতে না?” (মুক্তিযােদ্ধারা সমস্বরে বলে, করতাম, করতাম।) এরপর বঙ্গবন্ধু বলেন, “তা হলে মনে কর যুদ্ধ চলছে। তিন বছর যুদ্ধ চলবে। সেই যুদ্ধ দেশ গড়ার যুদ্ধ। অস্ত্র হবে লাঙল আর কোদাল।”
Reference:
১. দৈনিক ইত্তেফাক, ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১।
২. এমপিএ : মেম্বার প্রভিনশিয়াল অ্যাসেমরি বা প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য।
৩. এমএনএ : মেম্বার ন্যাশনাল অ্যাসেমরি বা জাতীয় পরিষদ সদস্য।
৪. দৈনিক ইত্তেফাক, ৭ জানুয়ারি ১৯৭২।
৫, সেনাবাহিনীতে যারা ব্রিগেড় কমান্ড করেন এবং এই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ফরমেশন কমান্ডার বলা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তখন গঠন পর্যায়ে ছিল । মুক্তিযুদ্ধকালে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জন্য গঠিত তিনটি ফোর্সকে তখন ব্রিগেড হিসেবে গণ্য করা হয়। ফরমেশন কমান্ডারদের সভা বলা হলেও এতে তিন ফোর্সের অধিনায়ক, সেক্টর কমান্ডার এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
৬. মুহাম্মদ আতাউল গনি (এম এ জি ওসমানী ; পরে জেনারেল ও মন্ত্রী)
৭. দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ জানুয়ারি, ১৯৭২।
৮. মুহাম্মদ খাদেমুল বাশার বীর উত্তম; ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ঢাকা বেসে কর্মরত ছিলনে। মে মাসের প্রথমার্ধে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। জুলাই মাস থেকে ৬ নম্বর সেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে । পরে এয়ার ভাইস মার্শাল এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান। ১৯৭৬ অালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত।
৯. চিত্তরঞ্জন (সি আর) দত্ত বীর উত্তম : ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যেজর পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় ছুটিতে ছিলেন। ২৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। বৃহত্তর সিলেটে সশস্ত্র প্রতিরােধ যুদ্ধে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী সময়ে ৪ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে। পরে পর্যায়ক্রমে মেজর জেনারেল এবং বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর, এখন বিজিবি) প্রথম মহাপরিচালক।
১০. লেফটেন্যান্ট কর্নেল ডি কে দাস ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন।
১১. কাজী নূরুজ্জামান বীর উত্তম: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়ায় যান। সেখানে অনুষ্ঠিত ৪ এপ্রিলের সভায় তিনি যােগ দেন। এরপর মুক্তিবাহিনীর কেন্দ্রীয় দপ্তরে কাজ করেন । সেপ্টেম্বর মাস থেকে ৭ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। মৃত্যু ২০১১। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আমৃত্যু সােচ্চার ছিলেন।
১২. মুহাম্মদ আবুল (এম এ) মঞ্জুর বীর উত্তম : ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন। তখন পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমান পাকিস্তান) কর্মরত ছিলেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। আগস্ট মাস থেকে ৮ নম্বর সেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে। পরে পর্যায়ক্রমে মেজর জেনারেল। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) হত্যার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিহত।
১৩. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম: ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এবং প্রেষণে ইপিআরের চট্টগ্রাম সেক্টরের অ্যাডজুটান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তার নেতৃত্বে বাঙালি ইপিআর সদস্যরা বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাংলাদেশে সামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিই প্রথম বিদ্রোহ করেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সশস্ত্র প্রতিরােধযুদ্ধে তার ভূমিকা অনন্য। পরে ১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।
১৪. জাতীয় মিলিশিয়া সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের ঘােষণা। পরিশিষ্ট ২ দেখুন ।
১৫. টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনী স্বাধীনতার পর কাদেরিয়া বাহিনী হিসেবে পরিচিতি পায় । এই বাহিনীর সামরিক প্রধান ছিলেন আবদুল কাদের সিদ্দিকী। বেসামরিক প্রধান ছিলেন লেখক আনােয়ার উল আলম।
রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা, আনোয়ার উল আলম, pp 11-16