You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.21 | বাংলাদেশের মুক্তি অবধারিত, আমরা পশ্চিম পাকিস্তানীদের দাসত্ব থেকে মুক্ত হব- মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী - সংগ্রামের নোটবুক

২১ মার্চ ১৯৭১ঃ আজকের এদিনে

অসহযোগ আন্দোলনের বিংশতিতম দিনে

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের বিংশতিতম দিনে মুক্তি পাগল হাজার হাজার মানুষের দৃপ্ত পদচারণায় রাজধানী ঢাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত মিছিলজয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধুস্লোগান তুলে কেন্দ্রীয শহীদ মিনার অভিমুখে এগিয়ে চলে। সেখানে মুক্তি অর্জনের শপথ নিয়ে মিছিল যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক, ঢাকার বিভিন্ন স্কুল শিক্ষকগন বায়তুল মোকাররমে এক সম্মিলিত সভায় বাংলাদেশ হতে সকল পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য প্রত্যাহার করে তদস্থলে বাঙ্গালী সেনা মোতায়েনের দাবী জানানো হয়। সভায় যে সকল শিক্ষক এখনো খেতাব বর্জন করেননি তাদের কঠোর নিন্দা করে। পরে তারা মিছিল সহকারে শহীদ মিনারে গমন করে সমাবেশের সমাপ্তি টানেন।
শহীদ মিনারে ঔষধ শিল্প কর্মচারী সমিতি সমাবেশ করে। সভা শেষে তারা ধানমণ্ডিতে শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
পুস্তক প্রকাশক বিক্রয় প্রতিস্থানের কর্মচারীরা মিছিল করে ধানমণ্ডিতে শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
সরকারী আধা সরকারী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গনে সমাবেশ করে। সভা শেষে তারা ধানমণ্ডিতে শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
বীমা কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে তারা সকল পশ্চিম পাকিস্তানী বিমা কোম্পানি সমুহ বাঙ্গালী ব্যবস্থাপনায় নেয়ার দাবী জানায়।
বাংলা একাডেমীতে লেখক শিবির গণমুখী কবিতা পাঠের আয়োজন করে।
ভূট্টো ঢাকা আগমনে বিক্ষুব্দ জনগন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। বিক্ষোভ কারীরা বিভিন্ন ফেস্টুন বহন করে যাতে তাকে খুনি উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাকে বাংলাদেশ ত্যাগের জন্য বলা হয়েছে।
বগুড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা এমএনএ একে মুজিবুর রহমান আক্কেলপুরী, আকবর আলী খান, প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য মাহমুদুল হাসান খানের বাসভবনে বোমা হামলা হয়েছে। ঘটনার পর পর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যাপক প্রহরার ব্যাবস্থা নিয়েছে।
১৯ মার্চ জয়দেবপুরে জারিকৃত কারফিউ দুপুর ১২টায় ঘন্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনরায় কারফিউ বলবৎ করা হয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন আগামী ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে। মগবাজারে মহিলা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক মহিলা সমাবেশে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারামিলিটারি গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
আদমজীতে এক বিরাট শ্রমিক সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী বলেছেন বাঙ্গালীরা আর কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না। মুক্তি স্বাধীনতার দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাঙ্গালীরা সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমিক লীগ সাধারন সম্পাদক আব্দুল মান্নান এমএনএ, আসম আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজ, শেখ শহিদুল ইসলাম, সায়েদুল হক সাদু।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচী ঘোষণা
২৩ মার্চ ভোর টায় সরকারী বেসরকারী এলাকায় প্রতিটি ভবনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন। সাড়ে টায় প্রভাত ফেরী যোগে শহীদদের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ। সকাল টায় পল্টন ময়দানে জয়বাংলা বাহিনীর কুচকাওয়াজ। ১১ টায় বায়তুল মোকাররমে জনসভা।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে ডিভিশনে ২৭ টি ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রখ্যাত আইনজীবী একে ব্রোহী ঢাকায় আসেন এবং ডঃ কামালের সাথে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে একদফা বৈঠক করেন।

চট্টগ্রামে ভাসানী

বিকেলে চট্টগ্রাম ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পোলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি অবধারিত। আমরা পশ্চিম পাকিস্তানীদের দাসত্ব থেকে মুক্ত হব। পৃথিবীতে এমন কোন শক্তি নেই যে সাত কোটি বাঙ্গালীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিবন্দকতা সৃষ্টি করতে পারে। তিনি ইয়াহিয়াকে বাংলাদেশ থেকে অবিলম্বে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য সরিয়ে নিতে বলেন অন্যথায় তারা ফিরে যেতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারন করেন। তিনি বলেন আওয়ামী লীগকে অবিশ্বাস করার কোন কারন নেই। তারা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিশ্বাসী। তিনি জনগণকে আওয়ামী লীগের সংগ্রাম পরিষদের পতাকা তলে দলবদ্ধ হতে বলেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন যাতে স্বাধীন বাংলাদেশ দেখে যেতে পারেন সভায় তিনি মোনাজাত পরিচালনা করেন