২০ মার্চ ১৯৭১ঃ আজকের এদিনে
আন্দোলনের উনবিংশতিতম দিন
আওয়ামী লীগ অফিসে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর ঢাকা শহরের বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটির প্রধান ও উপ প্রধানদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাহিনী প্রধান আব্দুর রাজ্জাক। সভায় বক্তব্য রাখেন শহর বাহিনী প্রধান ফজলুর রহমান। আব্দুর রাজ্জাক বাহিনী সদস্যদের শেখ মুজিবের প্রতিটি নির্দেশ পালনের মাধ্যমে সংগ্রাম এগিয়ে নেয়ার জন্য তাদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন দুষ্কৃতিকারীদের কেউ কেউ বাহিনীর টুপী নকল করে বিভিন্ন অপরাধ মুলক কাজ করে বেড়াচ্ছে তিনি তাদের প্রতিহত করার আহবান জানান। এদিকে আগামী ২৪ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা জেলা বাহিনীর সভা স্থগিত করেছেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামসুল হক।
প্রাদেশিক ৪র্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতি বায়তুল মোকাররমে সমাবেশ করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন নুর ইসলাম। সভায় দৃঢ় অভিমত প্রকাশ কর হয় আর আপোষ নয়। তারা বলেন বিগত কয় দিনে আপোষের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষ আপোষকামীদের প্রতিহত করবে। সভায় বক্তৃতা করেন আলমগীর কবির, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল মান্নান, আজিজ উদ্দিন, সাধারন সম্পাদক আব্দুল মান্নান, নুরুল ইসলাম।
১০ দিনের প্রশিক্ষন শেষে ছাত্র ইউনিয়নের ৫০০ সদস্য এর গনবাহিনী অস্র সহযোগে ঢাকার রাজপথ সমুহে মার্চ পাস্ট করে। এ সময় পথের দু ধারে দাড়িয়ে থাকা জনতা হাততালি স্লোগান দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানান। সোমবার থেকে তাদের ২য় ব্যাচ প্রশিক্ষন নিবে। এর আগে তারা ৯ প্লাটুনে বিভক্ত হয়ে ময়দানে তাদের বিভিন্ন কসরত প্রদর্শন করে। এখানে গন বাহিনীকে শপথ করান সংগঠনের সভাপতি নুরুল ইসলাম। তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় গণবাহিনীর সদস্যদের সর্বচ্চ ত্যাগ স্বীকারের আহ্বান জানান।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ারদী হলের মাঠে ঢাকা শহর ছাত্রলীগের স্বেচ্ছাসেবকদের প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। শহর ছাত্রলীগ সভাপতি মনিরুল হক চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক শেখ জাহিদ হোসেন উপস্থিত থেকে প্যারেড পরিচালনা করেন।
জয়দেবপুরে সেনাবাহিনীর খোয়া যাওয়া অস্র উদ্ধার হয়নি।
ক্যান্টনমেন্ট এর একটি ডোবায় (শাহীন স্কুল এবং টোব্যাকো কোম্পানী এবং বনানী রেলষ্টেশন সংলগ্ন অনেক ডোবা ছিল) গলাকাটা দুটি লাশ উদ্ধার।
রাজশাহীতে জাহানারা কামরুজ্জামানের সভাপতিত্তে বিশাল নারী সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহীতে গতকাল এবং আজ মাঝ রাতে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে তবে কোন এলাকায় হয়েছে তা জানা যায়নি।
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক নির্দেশে জানিয়েছে পরিষদের যে সকল শাখা সমুহ নিজ উদ্যোগে প্যারেড সমাপ্ত করেছে তাদের রবিবার ২১ মার্চ বিকেল ৪ টায় লিয়াকত (সোহরাওয়াবাদী) হলের মাঠে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। একই নির্দেশে পরিষদ তাদের সকল ইউনিট সমুহকে ২৩ মার্চ সকল ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। তবে পতাকাটি সাইজ হবে ৭ বাই ৫ ইঞ্চি সাইজের। পতাকার রঙ এবং চিহ্ন সঠিক (ইতিপূর্বে প্রকাশিত নির্দেশিকা অনুযায়ী) ব্যাবহারের জন্য বলা হয়েছে। একই রুপ নির্দেশ দিয়েছে শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ
ন্যাপ ভাসানী এবং ন্যাপ ভাসানী মহিলা শাখা ২৩ মার্চ যথাযথ স্বাধীন পূর্ব বাংলা দিবস ও জাতীয় শ্রমিক লীগ ২৩ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ দিবস পালনের জন্য জনগনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ জয়দেবপুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং জয়দেবপুরের জনতার পথ ধরে স্বাধীনতার আন্দোলনকে তীব্রতর করার আহবান জানান। জয় দেবপুরের ঘটনায় আহত দুজন মির্জাপুর হাসপাতালে মারা গিয়েছে তবে একজন শিশু হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন আরও চার জনের অবস্থা আশংকাজনক জয়দেবপুরে শুক্রবার জারী হওয়া সান্ধ্য আইন বিরামহীন ভাবে প্রযোজ্য হয়েছে।
লেঃ কম্যান্ডার জয়নাল আবেদিন এর কম্যান্ডে নৌবাহিনী প্রাক্তন সৈনিকগন বিকেলে শহীদ মিনারে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য দেন লেঃ সিদ্দিক, লেঃ কম্যান্ডার আইউব হোসেন, এমএ হোসেন, এমইউ আহমেদ। এমএ হোসেন তার বক্তব্বে বলেন তারা বাঙ্গালীদের ২৩ বছর শোষণ করে গেছে। সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ইসফাকুল মজিদ আইউবের চেয়ে ৮ জনের সিনিয়র থাকার পর ও তিনি সেনাপ্রধান হতে পারেননি। তারা বাংলাদেশে কেবল বাঙ্গালী সৈন্য মোতায়েন এবং পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ইয়াহিয়ার প্রতি দাবী জানান। বক্তারা প্রাক্তন বিমান, নৌ ও স্থল বাহিনী সমন্বয়ে একটি মুক্তি বাহিনী গঠনের জন্য প্রাক্তন সৈনিকদের প্রতি আহবান জানান। পরে মিছিল সহকারে তারা ধানমণ্ডি গমন করেন। সেখানে তারা শেখ মুজিবকে বলেন স্বাধীনতা অর্জনে আমরা পাশেই আছি আমাদের আদেশ করুন। শেখ মুজিব জবাব দেন জয় বাংলা।
অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নওয়াব হোসেন ক্যাপ্টেন আশরাফ হোসেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইসফাকুল মজিদের নেতৃত্ব এ মুক্তিবাহিনী গঠনের আহবান জানান।
শিক্ষানবিস চিকিৎসক সমিতির সভাপতি ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির সাধারন সম্পাদক ডাঃ আব্দুল হক এক বিবৃতিতে অসহযোগ চলাকালীন এদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী মহিলা ডাক্তার নিখোঁজ হয়েছেন বলে করাচীর জিন্নাহ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিক্যাল কলেজ এর ডাক্তারদের যে অভিযোগ পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন। তারা বলেন বাংলার স্বাধিকারের দাবী নস্যাৎ করার জন্য এ ধরনের ডাক্তার সমাজ জুলফিকার আলী ভূট্টোর হয়ে আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য যে ভুমিকা নিতে পারেন এ সংবাদ দেখে তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে সভা মিছিলের সংবাদ আসছে।