You dont have javascript enabled! Please enable it!

আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম কমিটি

১। সভাপতিঃ মাওলানা আবদুল হামিদ খান (ভাসানী)
২। সহ-সভাপতিঃ আতাউর রহমান খান
৩। সহ-সভাপতিঃ সাখাওয়াত হোসেন, প্রেসিডেন্ট, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স
৪। সহ-সভাপতিঃ আলী আহমদ খান, এম এল এ
৫। সহ-সভাপতিঃ আব্দুস সালাম খান
৬। সাধারণ সম্পাদকঃ শামসুল হক
৭। যুগ্ম সম্পাদকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
৮। সহ-সম্পাদকঃ খন্দকার মোশতাক আহমদ
৯। সহ-সম্পাদকঃ এ কে এম রফিকুল হোসেন
১০। কোষাধ্যক্ষঃ ইয়ার মোহাম্মদ খান

পটভূমি
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন
১৯৪৯ সালের ২৩ এবং ২৪ জুন ঢাকার কে.এম. দাস লেনস্থ হুমায়ূন সাহেবের (মতান্তরে কে.এম. রশীদ) বাসা ‘রােজগার্ডেন’-এর বৃহৎ হলরুমে আয়ােজিত প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের এক সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তৎকালীন নিখিল বঙ্গ মুসলিম লীগের সােহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম গ্রুপের অনুসারীরা পাকিস্তানের স্বাধীনতালাভের পরপরই কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে ঐক্যবদ্ধ হবার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাদের এ সকল উদ্যোগের ফলেই পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এর জন্ম হয়। কিন্তু প্রয়ােজন দেখা দেয় এক রাজনৈতিক সংগঠনের। মাওলানা আকরাম খাঁ এবং খাজা নাজিমুদিন হতে কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগের তাবেদারে পরিণত হয়, বাঙালির স্বার্থের চাইতে কেন্দ্রীয় সরকারকে খুশি রাখাই তাদের ব্রত হয়ে দাঁড়ায়। তাদের অসত কারণে মুসলিম লীগ সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিত্ত এবং ক্ষমতা মুসলমানদের রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়। অনেকটা শেকড় বিচ্ছিন্ন বটবৃক্ষের মতাে।
‘রােজগার্ডেন’ এ কর্মসম্মেলন আয়ােজনের সংক্ষিপ্ত পটভূমি জানা থাকা প্রয়ােজন। আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি মাওলানা ভাসানী সাতচল্লিশ পরবর্তী সময়ে পূর্ববঙ্গে ফিরে এসে ভাষা আন্দোলনে সমর্থন দিলেন এবং মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের সাথে ঐক্যবদ্ধ হলেন। এরমধ্যে টাঙ্গাইল উপ-নির্বাচনে মুসলিম লীগ মনােনীত প্রার্থী খুররম খান পন্নী ছাত্রনেতা শামসুল হকের নিকট পরাজিত হলে তরুণ কর্মীদের উৎসাহ এবং কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়। পরিস্থিতি অনুধাবন করে মাওলানা আকরাম খাঁ এবং খাজা নাজিমুদ্দিন বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা মুসলিম লীগের কমিটি পুনর্গঠন করে সােহরাওয়ার্দী হাশিম গ্রুপের অনুসারীদের বাদ দিয়ে দেয়। বাস্তব পরিস্থিতির কারণে টাঙ্গাইলে মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের এক কর্মীসম্মেলন ডাকা হয় এবং পরবর্তী সভা নারায়ণগঞ্জে রার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কর্মীসম্মেলনকে সফল করার জন্য খান সাহেব ওসমান আলী এম.এ.কে সভাপতি করে একটি শক্তিশালী অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আলমাস আলী, আবদুল আউয়াল, শামসুজ্জোহা প্রমুখ। রহমতউল্লাহ ইনস্টিটিউটে সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে তা পরিবর্তন করে পাইকপাড়া ক্লাবে রা হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে যােগদান করেন। সরকারি দলের গুণ্ডাদের আক্রমণে এ সময় নারায়ণগঞ্জের অন্যতম সংগঠক শামসুদ্দোহা আহত হন। সম্মেলনে ভবিষ্যতে রিকুইজিশন সভা আহ্বানের জন্য সদস্যপদের রশিদ-বই সংগ্রহের লক্ষ্যে আতাউর রহমান খান ও আনােয়ারা খাতুনকে পাকিস্তান মুসলিম লীগ প্রধান চৌধুরী খালেকুজ্জামানের সাথে করাচীতে গিয়ে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সভাপতি আকরাম খাঁ সংগঠনের রশিদ প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আতাউর রহমান খান ও আনােয়ারা খাতুন করাচীতে চৌধুরী খালেকুজ্জামানের সাথে দেখা করেও ব্যর্থ হন–রশিদ বই দেয়ার কোনাে সিদ্ধান্ত তিনি দেন নি।
মুসলিম লীগের কর্তৃত্ব পুরােপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চৌধুরী। খালেকুজ্জামান পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটি ভেঙে দিয়ে মাওলানা আকরাম খাঁকে চেয়ারম্যান করে কমিটি পুনর্গঠিত করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন :
আহ্বায়ক :
মাওলানা আকরাম খাঁ
যুগ আহ্বায়ক:
ইউসুফ আলী চৌধুরী ও আসাদউল্লাহ
সদস্য –
ডা আবদুল মােতালেব
মানিক আহমদ হােসেন (রংপুর)
নুরুল আমিন
মাওলানা আবদুল্লা হিল বাকী
হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ও
মনােয়ার আলী (সিলেট)
এমনি পরিস্থিতিতে সােহরাওয়ার্দী ও হাশিম গ্রুপের ঢাকার রােজগার্ডেনে কর্মীসম্মেলন (ওয়ার্কার্স ক্যাম্প নামে পরিচিত) আহ্বান ছাড়া আর কোনাে বিকল্প ছিল না।
১৫০ নং মােগলটুলী হলাে প্রগতিশীল মুসলিম লীগ কর্মীদের মূল ঠিকানা। সাহসী এবং নিবেদিত কর্মী শওকত আলী এ অফিসকে জাগিয়ে রাখতেন। শওকত আলী এবং ইয়ার মােহাম্মদ খান ২৩ এবং ২৪ জুন ১৯৪১ কর্মীসম্মেলন আয়ােজনে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।
২৩ ও ২৪ জুনের কর্মীসম্মেলনকে সফল করার জন্য মাওলানা আবকুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি করে অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করা হয়। ‘রােজগার্ডেন সম্মেলনে’ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতৃস্থানীয় ২৫০ থেকে ৩০০ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি মাওলানা ভাসানীর লিখিত বক্তব্যের পর সম্মেলনের মূল সভাপতি আতাউর রহমান খান আসন গ্রহণ করেন। সম্মেলনে নতুন সংগঠনের প্রয়ােজনীয়তা, উদ্দেশ্য, করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলােচনার পর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কেউ কেউ সংগঠনের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র বজায় রাখার জন্য সংগঠনের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়ার কথা বলেন কিন্তু অধিকাংশ সদস্যই কৌশলগত কারণে এ শব্দ রাখার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
সম্মেলনে ব্যাপক আলাপ-আলােচনার পর মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে চল্লিশ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে যারা ছিলেন তাদের তালিকা

১। সভাপতিঃ মাওলানা আবদুল হামিদ খান (ভাসানী)
২। সহ-সভাপতিঃ আতাউর রহমান খান
৩। সহ-সভাপতিঃ সাখাওয়াত হোসেন, প্রেসিডেন্ট, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স
৪। সহ-সভাপতিঃ আলী আহমদ খান, এম এল এ
৫। সহ-সভাপতিঃ আব্দুস সালাম খান
৬। সাধারণ সম্পাদকঃ শামসুল হক
৭। যুগ্ম সম্পাদকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
৮। সহ-সম্পাদকঃ খন্দকার মোশতাক আহমদ
৯। সহ-সম্পাদকঃ এ কে এম রফিকুল হোসেন
১০। কোষাধ্যক্ষঃ ইয়ার মোহাম্মদ খান

Reference:
ভাষা আন্দোলন, বায়ান্ন পূর্ব, গোলাম কুদ্দুস, পৃষ্ঠা ২০৯-২১২, নালন্দা, ২০১৮
সংগ্রামের নোটবুক
www.songramernotebook.com

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!