সোহরাওয়ার্দী ১২ ঘণ্টায় সরালেন মুখ্যমন্ত্রীকে, আর শেখ মুজিব ৩ দিনে সরালেন পুরো একটি মন্ত্রীসভা
১৯৫৭ সালের ডিসেম্বরে রিপাবলিকান পার্টির নেতা মালিক ফিরােজ খান নুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। পূর্ব পাকিস্তানে তখন চলছে ভাঙাগড়ার খেলা। ১৯৫৮ সালের মার্চে প্রাদেশিক আইন পরিষদের ১৯৫৮-৫৯ সালের খসড়া বাজেট উপস্থাপন করা হয়। মুসলিম লীগ, কৃষক-শ্রমিক পাটি ও ন্যাপের সদস্যরা অতিরিক্ত কর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এককাট্টা হন। তাদের সুরে সুর মেলান। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলাের আওয়ামী লীগের ১১ জন সদস্য। গভর্নর ফজলুল হক ৩১ মার্চ আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করে কৃষক-শ্রমিক পার্টির আবু হােসেন সরকারকে মন্ত্রিসভা গঠন করার সুযােগ করে দেন। এতে সােহরাওয়ার্দী খুবই মনঃক্ষুন্ন হন। ওই রাতে তিনি প্রধানমন্ত্রী ফিরােজ খান নুনকে টেলিফোনে হুমকি দিয়ে বলেন, যদি আধা ঘণ্টার মধ্যে গভর্নর ফজলুল হক ও আবু হােসেন সরকারের মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করা না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ নুন সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেবে। এই হুমকিতে কাজ হলাে । ফজলুল হক চার ঘণ্টার মধ্য বরখাস্ত হলেন। তার জায়গায় পূর্ব পাকিস্তানের চিফ সেক্রেটারি হামিদ আলীকে অস্থায়ী গভর্নর নিযুক্ত করা হলাে। ৩১ মার্চ রাতে ১২ ঘন্টার মুখ্যমন্ত্রী আবু হােসেন সরকার বিদায় নিলেন। ১ এপ্রিল আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভা পুনর্বহাল হলাে। কিন্তু সংকট চলতেই থাকল। ১৮ জুন একটা প্রস্তাব পরিষদে পাস হলাে না। ১৯ জুন একটি কাটমােশনে’ হেরে যাওয়ার ফলে আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভার পতন হলাে। ইতিমধ্যে হামিদ আলীর জায়গায় সুলতান উদ্দিন আহমদ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হয়েছেন। তিনি আবু হােসেন সরকারকে মন্ত্রিসভা গঠন করতে বলেন। এ মন্ত্রিসভার আয়ু ছিল তিন দিন। ২১ জুন মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। প্রস্তাবটি ১৫৬-১৪২ ভােটে পাস হয়। ২৩ জুন আবু হােসেন সরকার পদত্যাগ করেন। পূর্ব পাকিস্তানে প্রেসিডেন্টের শাসন জারি হলাে। দুই মাস পর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা ঘােষণা দিলেন ১৯৫৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হবে।
Reference: আওয়ামী লীগঃ উত্থান পর্ব – ১৯৪৮-১৯৭০ – মহিউদ্দিন আহমদ, p 94-95