You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৯৫৭ সালের ১৮ মার্চ অলি আহাদ ভাসানীর সঙ্গে টাঙ্গাইলে দেখা করেন। রাতে ভাসানী তার হাতে একটি পদত্যাগপত্র দিয়ে সেটি দৈনিক সংবাদ এর সম্পাদক জহুর হােসেন চৌধুরীর কাছে পৌছে দিতে বলেন। পদত্যাগপত্রটি এখানে উদ্ধৃত করা হলাে :
জনাব পূর্ব পাক আওয়ামী লীগ সেক্রেটারি সাহেব, ঢাকা। আরজ এই যে, আমার শরীর ক্রমেই খারাপ হইতেছে এবং কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এইবার খুলিতে হইবে, তদুপরি আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার লিডার সদস্যদের কাছে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাব ২১ দফা ওয়াদা অনুযায়ী জুয়া, ঘােড়দৌড়, বেশ্যাবৃত্তি ইত্যাদি হারামি কাজ বন্ধ করতে, সামাজিক ও ধর্মীয় বিবাহ বন্ধনের ওপর ট্যাক্স ধার্য করা জনমত অনুযায়ী বাতিল করিতে আবেদন জানাইয়া ব্যর্থ হইয়াছি। ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটেরও কোনাে প্রতিকার দেখিতেছি না। ২১ দফা দাবি ও অন্যান্য দফা যাহাতে অর্থ ব্যয় খুব কমই হবে তাহাও কার্যকরী করার নমুনা না দেখিয়া আমি আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ হইতে পদত্যাগ করিলাম। আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করিয়া বাধিত করিবেন।

স্বা:
মাে: আবদুল হামিদ খান ভাসানী,
কাগমারী, ১৮-৩-৫৭ (২৪)

শেখ মুজিবের ধারণা হলাে, অলি আহাদ দলের মধ্যে কোন্দলের চেষ্টা করছেন। ভাসানীর পদত্যাগপত্র সাধারণ সম্পাদকের কাছে না দিয়ে কেন জহুর হােসেন চৌধুরীর কাছে দেওয়া হলাে, এই প্রশ্নও উঠল। আওয়ামী লীগের ৫৬ সিমসন রােডের অফিসে ৩০ মার্চ (১৯৫৭) কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযােগে অলি আহাদকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। সভায় কমিটির ৩৭ জন সদস্যের মধ্যে ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। ৯ জন সদস্য বহিষ্কারের প্রস্তাবের বিরােধিতা করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইয়ার মােহাম্মদ খান। (কোষাধ্যক্ষ), আবদুল হাই (প্রচার সম্পাদক), আবদুস সামাদ (শ্রম সম্পাদক), সেলিনা বানু (মহিলা সম্পাদক), দবিরউদ্দিন আহমদ (সভাপতি, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ), হাতেম আলী খান, অধ্যাপক আসহাবউদ্দিন আহমদ এবং আকবর হােসেন আখন্দ (সভাপতি, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ)। ৫ এপ্রিল নির্বাহী কমিটির সভায় মওলানা ভাসানীকে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের অনুরােধ জানানাে হয়। সােহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আলােচনা না হওয়া পর্যন্ত ভাসানী পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করবেন না বলে জানিয়ে দেন। ৩১ মে শেখ মুজিব মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন এবং ১৩-১৪ জুন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভা ডাকেন। প্রথমে ঢাকার পিকচার প্যালেসে (পরবর্তী নাম শাবিস্তান) এবং পরে গুলিস্তান সিনেমা হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সােহরাওয়ার্দী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিতর্ক হয়।২৫
সম্মেলনে উপস্থিত কাউন্সিলররা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভােটে সােহরাওয়ার্দীর পররাষ্ট্রনীতি অনুমােদন করেন। ভাসানী আবার ভােটাভুটি দাবি করেন। দ্বিতীয়বার ভােট নেওয়া হলে সােহরাওয়ার্দীর পক্ষে আরও বেশি ভােট পড়ে। তিনি ৮০০ ভােট পান। ভাসানীর পক্ষে মাত্র ৩৫টি ভােট পড়ে। আওয়ামী লীগের কোনাে সম্মেলনে এটাই ছিল ভাসানীর শেষ উপস্থিতি। ২৬

Ref:
আওয়ামী লীগঃ উত্থান পর্ব – ১৯৪৮-১৯৭০ – মহিউদ্দিন আহমদ, p 90-91

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!