You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.18 | আওয়ামী লীগ সাহায্য তহবিলে যারা দান করেছেন | চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের তদন্ত দল | বিমানবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের মুক্তি আন্দোলনে একাত্মতা | চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের তদন্ত দল | - সংগ্রামের নোটবুক

১৮ মার্চ ১৯৭১ঃ আজকের এদিনে

অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিবসে

বিভিন্ন বাজারে সামরিক বাহিনীর কেনাকাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন থেকে সি ১৩০ বিমানে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে মাংস ও অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য বহন করে আনা হচ্ছে।
অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিবসে সরকারি-বেসরকারি ভবনের শীর্ষে কালো পতাকা উড়িয়ে, অফিস আদালতে অনুপস্থিত থেকে সর্বশ্রেণীর কর্মচারীরা শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত সংগ্রামের কর্মসূচিকে সফল করে তোলেন।
নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ শাহজাদী হারুনের সভানেত্রীত্বে নার্সিং কলেজ, নার্সিং স্কুল, ঢাকা মেডিক্যাল, মিটফোর্ড কলেজের নার্স ও মিটফোর্ড নার্সিং স্কুলের নার্সগন শহীদ মিনারে সভা করে বিশাল মিছিল সহকারে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ীতে গমন করে। সেখানে তাদের উদ্দেশে শেখ মুজিব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন।
কাঁঠাল বাগানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এমএনএ নুরজাহান মুর্শিদ, এমএনএ রাজিয়া বানু, সভায় স্থানীয় মহিলা নেত্রী হাসনা হেনা, সালেহা মজুমদার, মহামুনি বক্তব্য দেন। তারা সেখানে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেন। ডাঃ ফিরোজা বেগম, ডাঃ আব্দুল মান্নান, ডাঃ হাবিবুর রহমান এখানে নিয়মিত স্বাস্থ্য কর্মী প্রশিক্ষন দিচ্ছেন।
সেনাবাহিনীর কড়া প্রহরা সত্ত্বেও রাত ৮ টার দিকে টেলিভিশন কেন্দ্রে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে কেউ হতাহত হয়নি।
চট্টগ্রামে রাত নয়টার দিকে মমিন রোডস্থ মার্কিন তথ্য কেন্দ্রের সামনে হাত বোমা বিস্ফোরিত হয়।
অলি আহাদের বাংলা জাতীয় লীগ ২৩ মার্চ বাংলাদেশ দিবস পালনের জন্য দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
বাংলা ছাত্রলীগ সভাপতি আল মুজাহিদি এবং সাধারন সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ২৩ মার্চ প্রতেক্ষ সংগ্রাম দিবস পালনের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। তারা ২৩ মার্চ তাদের সকল কার্যালয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে।

ঢাকার ৪১ জন আইনজীবী যুক্ত বিবৃতিতে ২৩ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ ঘোষণার জন্য আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সকল পাকিস্তানী সৈন্যদের ২৩ মার্চের মধ্যে দেশ ত্যাগের নির্দেশ, মুক্তি ফৌজ গঠন, রাজবন্দীদের মুক্তি এবং বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী পণ্য বর্জনের করার নির্দেশ দেয়ার জন্য শেখ মুজিবের প্রতি আহ্বান জানান। আইনজীবীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আলী আশরাফ, এবিএম মোজাফফর হোসেন, এমআরএম আব্দুল হাই, ইউসুফ আলী, সতীশ চন্দ্র রায়।
ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপ এর ৫০ জন মহিলা স্বেচ্ছাসেবক বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে অস্র প্রশিক্ষন শুরু করে।

বিমানবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের মুক্তি আন্দোলনে একাত্মতা

ঢাকায় বিমানবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে উইং কম্যান্ডার বাকীকে আহ্বায়ক করে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। সভায় বক্তব্য রাখেন আগরতলা মামলার আসামী শামশুল হক, তাজউদ্দিন, রোকনউদ্দিন, শাহজাহান চৌধুরী, তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে দেশকে মুক্ত করার শপথ নেন। বক্তারা বলেন বাংলার মুক্তির জন্য তারা জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন।তারা জনগণকে দেশের মুক্তি আন্দোলনে শরীক হওয়ার আবেদন জানান এবং বলেন এ আন্দোলন হবে ভিয়েতনামের মতই। বক্তারা বলেন আমরা স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠন করব। একই সাথে স্থল ও নৌ বাহিনী গঠনেরও তাগিদ দেন বক্তারা।

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের তদন্ত দল

মওলানা ভাসানীর অনুরোধে চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক গুলিবর্ষণ ও অন্যান্য ঘটনা সম্পর্কে সরেজমিন তদন্তের জন্য শেখ মুজিবের নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যান। কমিটির সদস্যরা হলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খন্দকার মোস্তাক, পিপল সম্পাদক ও এমএনএ আবিদুর রেজা।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির উপ-নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদপত্রে তিনি বিবৃতিতে বলেন, উপর্যুপরি প্রতিবাদ সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর দায়িত্ব জ্ঞানহীন কার্যকলাপ বর্ধিত পরিমানে অব্যাহত আছে। আমরা জানিতে পেরেছি যশোর খুলনা রোডে এবং সংলগ্ন এলাকায় সেনাবাহিনী বিনা কারনে নিরীহ জনগণকে হয়রানী এবং নির্যাতন করছে। আজ সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিমানবন্দর সংলগ্ন তেজগাঁয়ে ও মহাখালীতে নিরস্র শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। সৈন্যরা এই দুই স্থানে নিরস্ত্র আরোহীদের নির্মমভাবে প্রহার করে এবং তাদের টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় নগরীতে জনসাধারণের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী নড়াইলের এসডিওকেও তার গাড়ীতে কালো পতাকা থাকায় হেনস্থা করে।
তিনি বলেন নিরস্ত্র মানুষের ওপর উস্কানিমূলক আচরণ, তা যে কোন মহলেরই হোক না কেন, আমরা আর সহ্য করবো না। এর ফলাফলের দায়িত্ব উস্কানিদাতাদেরই সম্পূর্ণ বহন করতে হবে।

শোভাযাত্রায় আগতদের প্রতি মুজিব

ধানমণ্ডির বাসভবনে শোভাযাত্রায় আগতদের শেখ মুজিব বলেন বাংলার মানুষ তোমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। আঘাত যদি আসে প্রত্যাঘাত কর, পাল্টা আঘাত হানো। তিনি বলেন সাত কোটি শোষিত বঞ্চিত বাঙ্গালীর সার্বিক মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। চরম ত্যাগের বিনিময়ে হলেও আমরা লক্ষে পৌছব। তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও সু শৃঙ্খল থাকার আহবান জানান। নার্সিং ছাত্রছাত্রীদের প্রতি তিনি নিজেই স্লোগান ধরেন জয়বাংলা। তারা স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকলে তাদের উদ্দেশে বলেন তোমরা স্বাধীনতা পাবে। ইউনাইটেড এবং ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের প্রতি শেখ মুজিব বলেন তারা যেন তার নির্দেশ অনুযায়ী (ব্যাংকিং) চলে।

আওয়ামী লীগ সাহায্য তহবিলে যারা দান করেছেন (অংশ) কাশেম কটন মিল (মালিক পরে দালাল মন্ত্রী) ১০৭ মতিঝিল ৫০০, সাদেক মিয়া মিরপুর গরুর হাট ৫০০, ওমর সন্স ৭৫০০, খ্রিষ্টান পরিষদ ১৫০০, মাস রেকি জুট (নবাব আসকারী, পরে পাকিস্তান গমন) ১০০০, সাইফুদ্দিন ৭৯/বি বনানী ১০০০, তারা মিয়া ১০০০০, একে এম ফজুলুল হক মওলা ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স ২০০০, নারায়নগঞ্জ পৌরসভার সুইপার ৩০৫ টাকা। নরসিংদি আওয়ামী লীগ ২০০১, ৮ম ব্যাচ সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল ২৫০, ঢাকা আরিচা বাস মালিক সমিতি ৫০০০, এসএ খালেক বিউটি সিনেমা হল ৫০০, আমিন গ্রুপ আমিন কোর্ট ৫০০০, ইস্টার্ন ব্যাংকিং ৮৫০০, লুতফর রহমান খান এলিফেন্ত রোড মগবাজার ১০০০, নুরুল ইসলাম খান ৩৭ পুরানা পল্টন ২০০০, হারুনুর রশিদ মোল্লা চেয়ারম্যান হরিরামপুর মিরপুর ১০০০, ছাত্রলীগ ইব্রাহীমপুর ৪২ টাকা ৭৫ পয়সা, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ছাত্র ৩০০০, আমানুল্লাহ জুট ট্রেডিং ১৪/২ চাষারা ২৫০০, ফিলিপ্স ৫০০০, আসগর হোসেন ভুইয়া খানপুর, নারায়ণগঞ্জ ২৫০০।