You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.15 | নিউজউইকের সাথে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার - সংগ্রামের নোটবুক
৬৭। নিউজউইকের সাথে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ১৫ নভেম্বর, ১৯৭১

Unicoded by Nusrat Jahan Ima

<১২, ৬৭, ১৬৩১৬৪>

নিউজ উইক ম্যাগাজিনে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার

১৫ নভেম্বর ১৯৭১

পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ প্রসঙ্গ

বেশ দীর্ঘ সময় ধরে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কর্মকান্ড ও বক্তব্য খুবই প্ররোচনামূলক ও হুমকিস্বরুপ হলেও, ভারত এক্ষেত্রে কিছুই করেনি। এখন, যখন আমরা মনে করছি যে আমাদের কে হুমকি দেয়া হচ্ছে, স্বাভাবিক ভাবে আমরা আমদের সীমান্ত অরক্ষিত অবস্থায় রাখতে পারি না। আমি জানি না এমন কোন দেশ আছে কিনা যারা বলবে, “ আমরা আমাদের সীমান্ত অরক্ষিত অবস্থায় রেখে যাবো”। আমাদের সীমান্তে যখন এ অবস্থা চলছে, তখন আমাদের কি করা উচিত? আমরা কি শুধু বসে থাকবো আর বলবো, “যা খুশি করো, এমনকি এর পরিনতি যদি আমাদের জন্য খুবই বিশাল হয়? … আমি এটাই বলবো, মোটের উপর, ভারতের মানুষ যুদ্ধ চায় না। আমাদের অনেক বাক্যবাগীশ লোকজন আছেন, যারা যুদ্ধ চায়, আবার কিছু চরমপন্থীরাও আছেন, যারা যুদ্ধ চান। কিন্তু আমাদের লোকজনদের মধ্যে ভারত-ঘৃনা আন্দোলনের (যা পাকিস্তানের আছে)  মতো পাকিস্তান-বিরোধী কোন আন্দোলন নেই। আমি আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করি, সেখানে কোন যুদ্ধ হবে না। এবং আমি আমার সাধ্য মতো সব করছি যাতে এমনটা না হয়, পশিম পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে আমরা সৈন্য সরিয়ে ফেলায় যুদ্ধের আশংকা এখন অনেক টাই কম। কিন্তু যদিও পরিস্থিতি ঠিক হয়ে উঠছে, তবুও পূর্ব দিকেই বিপদের আশংকা বেশি। আমরা অনুভব করতে পারছি, পুর্ব ভারতের বিপদ প্রতিদিনই একটু করে বাড়ছে।

বাঙ্গালীদের সমর্থনে

শুধুমাত্র শরনার্থীদের আসতে শুরু করা দেখেই কি আপনি বলবেন যে পাকিস্তান সংকটে ভারতের হাত ছিলো? নাকি এর পর (পাকিস্তানী সেনা সন্ত্রাস) শুধু বলবেন, “আচ্ছা, হয়তো কিছু গেরিলারা ভারত থেকে এসেছে” ……… কিছু প্রশিক্ষন হয়তো আমাদের দিক থেকে দেয়া হয়েছিলো, কিন্তু সব টাই না। এমনকি গেরিলারাও এখন আর ভারতের উপর নির্ভরশীল নয়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, বেশিরভাগ গেরিলারাই পূর্ব বাংলার আধা সামরিক বাহিনীর …… এবং তারাই নতুন দের প্রশিক্ষন দিচ্ছে……… যা ছিলো বাঙালী মননে সুগভীর ক্ষত।

আর যতক্ষন তাদের মধ্যে উদ্দীপনা আছে, এই পাকিস্তানিদের উপর বাঙ্গালীদের নিয়ন্ত্রন নেবার আগেই, পাকিস্তানীদের পূর্ব পাকিস্তানের এই সাড়ে সাত কোটি মানুষদের মেরে ফেলতে হবে… ভারত কেবলমাত্র খুবই সামান্য ও পরোক্ষ ভাবে এ ধরনের গনহত্যা প্রতিহত করতে পারে। এবং আমার বলতে দ্বিধা নেই যে, আজ আমি যদি বাঙ্গালীদের ন্যায় এই পরিস্থিতিতে থাকতাম, আমি অবশ্যই যুদ্ধ করতাম। সে যাই হোক, আমরা ব্রিটিশ দের সাথে যুদ্ধ করেছি এবং সারা বিশ্ব জুড়ে সকল স্বাধীনতা সংগ্রাম কে উৎসাহিত করি।

বাঙ্গালী শরনার্থীদের নিয়ে

শরনার্থীদের তদারকি করার মানে হলো আমাদের অনেক কার্যক্রম কে কমিয়ে আনা, এর নিশ্চিত  মানে ছিল জীবন যাপনে কঠোরতা নিয়ে আসা, সরকারি ব্যয় হ্রাস করা এবং বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির নতুন করে তৈরি করা। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল বেশ, অনেক বেশি (বোঝা)। আমি মনে করি না যে এটা আমাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিবে, আর আমরা তলিয়ে যাবো… কিন্তু এই প্রধান বিপদ এই বোঝা নয়, যা আরো অনেক বেশি। এটা ছিল সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা যা এই  সমস্যা থেকে ক্রমবর্ধমানে বেরিয়ে আসছিলো। এবং আমাদের মনে হয় এখানে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই বাস্তব হুমকি আছে।

পাকিস্তান ভাঙ্গন

আমি মনে করি না, কোন সুবিবেচক দেশই চাইবে না তার প্রতিবেশী দেশের ক্ষতি হোক। দূর্বল প্রতিবেশি ছাড়াও আমাদের নিজেদেরই যথেষ্ট সমস্যা আছে। এটা কোন সুস্থ পরিস্থিতি না… (কিন্তু)  আমাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, যে পুর্ব বাংলা আর কখনোই একইভাবে পাকিস্তানের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবে না।

 ভারতকে সোভিয়েত এর সাহায্য

আমি কোন কালেই সাহায্য চাইনি। এমনকি বাচ্চা কালেও আমি কোন মানুষকে বলিনি, “ দয়া করে আপনি আমার জন্য এটা একটু করে দিবেন অথবা আমাকে এটা দিবেন? ” আমি সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে সাহায্য চাইনি। পরিস্থিতি কেমন, তার ব্যাখ্যা আমি তাদের দিয়েছি যেমন অন্য দেশ গুলোতে দিয়েছি। এখন, ভারতের স্থিতিশীলতা, আমাদের প্রদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ন কি না তা নির্ভর করে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্যান্য দেশের সিদ্ধান্তের উপর। আমরা অবশ্যই সহযোগিতা কে স্বাগত জানাই, তা যে কিঞ্চিৎ পরিমানই আসুক। আমরা সমর্থনকে স্বাগত জানাই, আমরা সহমর্মিতা কে স্বাগত জানাই। কিন্তু আমি সব সময়ই আমার নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি এবং আমি চাই ভারতও সর্বদা তার নিজের পায়ে দাড়াক। আমরা বিশ্বের কোন দেশের উপরই নির্ভরশীল হতে চাই না।

ইয়াহিয়া খান সম্পর্কে

সে এমন একজন ব্যাক্তি, যে তার নিজের দেশেই নির্বাচিত হতে পারেনি, যদি সেখানে সুষ্ঠ নির্বাচন হয়েও থাকে। আমি বলবো, এমনকি সে কোন প্রদেশের জন্যও নির্বাচিত হবে না  যদি সেখানে সুষ্ঠ নির্বাচন হয়ে থাকে। ( নিউজ উইকের সাক্ষাৎকারে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার এক বিবৃতির জবাব দিতে বলা হলে, মিসেস গান্ধী লক্ষ্য করেন যে, ইয়াহিয়া তাকে “ ঐ মহিলা” বলে উল্লেখ করেছেন)। “ঐ মহিলা” এই মন্তব্য নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত না, কিন্তু এতে এই ব্যাক্তির মানষিকতা কিরুপ তা বোঝা যাচ্ছে। আমি বলতে চাচ্ছি, পূর্ব পাকিস্তান বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে তিনি তার ক্ষমতা কীভাবে যাচাই করবেন? যদি সে তার নিজের দেশের ছোট্ট অংশের ও বিচার করতে না পারেন, তো ভারতে তার বিচারের কি মূল্যই বা আছে? তিনি এ নিয়ে কি বা জানেন? এটা এমন এক বিশ্ব যা তার চিন্তার ও বাইরে।