১৭ মার্চ ১৯৭২ঃ রেসকোর্সের জনসভায় ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ
বিকেল সাড়ে তিনটায় টায় তিনি রেসকোর্স সভায় যান। রেসকোর্সের জনসমাবেশে ১০ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান চারটা পর্যন্ত ভাষণ দেন। এরপর ইন্দিরা গান্ধী ভাষণ দেন তিনি জনগণকে বাংলায় শুভেচ্ছা জানান এবং কিছুক্ষন বক্তব্য দেন। তিনি তার বক্তব্বে বলেন ধ্বংসস্তুপ থেকেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন বাংলাদেশের দুঃখের দিনে ভারতের জনগন অস্রু সংবরণ করতে পারেনি। তিনি জানান বাংলাদেশের জনগনের জন্য ভারতের জনগনের গভীর ভালবাসা রয়েছে। শেখ মুজিব সম্পর্কে তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু বাংলার নহে সারা বিশ্ব এর নির্যাতিত মানুষের বন্ধু। তিনি বলেন বাংলাদেশের সাথে ভারতের মৈত্রী সম্পর্ক দৃঢ় হবে। তিনি বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সকল ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেন।
এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তার বক্তব্য এ বলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সংহতির পক্ষে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। দু দেশের বন্ধুত্ব ও ভাতৃত্ব এ ফাটল ধরাতে চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব চিরস্থায়ী। দুনিয়ার কোন শক্তি তা নস্যাৎ করতে পারেনা।
জনসভা থেকে তিন মহিলা সহ সাতজন দুষ্কৃতিকারী আটক হয় যাদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লোকজন ভীষণ পিটুনি দিয়েছে। এদের রাজাকার মিলিশিয়ার সদস্য বলে ধারনা করা হচ্ছে। তাদের পুরুষ সদস্যদের কাছ থেকে ধারালো অস্র এবং মহিলাদের কাছ থেকে গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়। পরে আটক আসামী এবং অস্র সাংবাদিকদের দেখানো হয়। পৃথক আরেক ঘটনায় এক বেক্তির সুটকেস তল্লাসি করে একটি স্টেনগান উদ্ধার করা হয়। ঘটনাগুলি ঘটে সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে। এ ঘটনায় ইন্দিরা গান্ধীর রেসকোর্স থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আনা নেয়ার সময় কঠোর নিরাপত্তা অবলম্বন করা হয়। তার শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের কর্মসূচী নিরাপত্তার জন্য বাতিল করা হয়েছে। এ কর্মসূচীতে ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী সরণ সিং। এ সময় একুশের গান বাজানো হয়।
মুজিব ইন্দিরা আলোচনা
প্রথম দিনে বঙ্গভবনে মুজিব ইন্দিরা তিন দফা আলোচনায় মিলিত হন। প্রথম দুটি বৈঠক হয় একক একক ভাবে। প্রথম বৈঠক শুরু হয় দুপুর সোয়া বারোটায় এবং ২য় বৈঠক শুরু হয় সন্ধ্যা ছয়টায়। ৩য় বৈঠকটি ছিল সহায়তাকারী সহ পূর্ণাঙ্গ বৈঠক। এ বৈঠক শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। অর্থাৎ ২য় বৈঠকের পরপরই। উভয়ের এ বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিল বাণিজ্য, বন্যা নিয়ন্ত্রন, যোগাযোগ, যুদ্ধবন্দী।
এ ছাড়াও বঙ্গভবনে দু দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় আলাদা ভাবে দুই দফা বৈঠক করেন। পরে তারা প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের সাথে মুল বৈঠকে যোগ দেন।
এ ছাড়াও বিশেষজ্ঞরাও আলাদাভাবে আরও কয়েকটি বৈঠকে মিলিত হন।
বাংলাদেশ বন্যা নিয়ন্ত্রন এবং ভারত বাংলাদেশের নৌ পথে ভারতীয় পণ্য চলাচলের বিষয়টি গুরুত্তের সাথে আলোচনা করে।
নৈশ ভোজে ইন্দিরা গান্ধী
বঙ্গভবনে ইন্দিরা গান্ধীর সন্মানে আয়োজিত নৈশ ভোজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার ভাষণে বলেন শেখ মুজিবের নেতৃত্ব এ বাংলাদেশ একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশে পরিনত হবে। তিনি বাংলাদেশের পুনর্গঠনে তার দেশের সম্ভাব্য সকল প্রকার সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র রুপে দেখতে চায়।
রাতে ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গভবনে জসীম উদ্দিনের নকশী কাথার মাঠ গীতি নাট্য উপভোগ করেন।
ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দুটি স্মারক খাম প্রকাশ করেছে।