You dont have javascript enabled! Please enable it! তাজউদ্দীন আহমদের বংশ পরিচয় - সংগ্রামের নোটবুক

তাজউদ্দীন আহমদের বংশ পরিচয়

তাজউদ্দীন আহমদের পূর্ব পুরুষ মােগল সম্রাটদের কর্মকর্তা ছিলেন। তারা দিল্লি থেকে বাংলায় ধর্ম প্রচারের জন্য আগমন করেন এবং গফরগাঁও থানার নিগাইর গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তার বসতবাড়ি খানবাড়ি হিসেবে পরিচিত। এ বংশের মােহাম্মদ ইব্রাহিম খান বিবাহ করে ঢাকা জেলার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। দরদরিয়া হতে নিগুয়ারী দূরত্ব ৬ মাইল। কাপাসিয়া ও গফরগাঁও পাশাপাশি থানা, নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন। ইব্রাহিম খান দরদরিয়ায় কৃষি জমি ও বনভূমির মালিক ছিলেন। তার পুত্র মােহাম্মদ ইয়াসিন খান। ইয়াসিন খানের পুত্র তাজউদ্দীন আহমদ। তাজউদ্দীন আহমদের মাতার নাম মােসাম্মৎ মেহেরুন্নেসা খানম । ইয়াসিন খান ও মেহেরুন্নেসার ৪ পুত্র, ৬ কন্যা। চার পুত্র হলেন- ওয়াজিউদ্দীন, তাজউদ্দীন আহমদ, মফিজউদ্দীন আহমদ খান এবং আফসার উদ্দীন আহমদ খান। ভাইদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ওয়াজিউদ্দীন ও কনিষ্ঠ ভ্রাতা মফিজউদ্দীন মৃত। এখন একমাত্র আফসার উদ্দীন আহমেদ খান জীবিত। তাজউদ্দীন আহমদ বিখ্যাত খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি খান পদবি ব্যবহার করেননি।১
ঢাকা জেলার কাপাসিয়া থানা ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। ঢাকা জেলার ৫টি থানা নিয়ে গাজীপুর মহকুমা সৃষ্টি এবং ১৯৮৪ সালে গাজীপুর মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়। গাজীপুর ঐতিহাসিক স্থান। বারভূঁইয়ার শ্রেষ্ঠ ভূঁইয়া ঈশা খাঁর রণক্ষেত্র ছিল গাজীপুরে। গাজীরা ছিলেন এ অঞ্চলের জমিদার, পরে ভাওয়ালের রাজা। ব্রিটিশ আমলের বিখ্যাত জমিদার ভাওয়ালের দ্বিতীয় কুমার ভাওয়াল সন্ন্যাসী নামে খ্যাত। এ অঞ্চলের অন্যতম সম্পদ গজারি বন। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া থানা বানার ও শীতলক্ষ্যা নদী দ্বারা বিধৌত। বানার ও শীতলক্ষ্যা নদী পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর শাখা। ঢাকার উত্তর ও ময়মনসিংহ জেলা ব্ৰহ্মপুত্র নদের পলল দ্বারা গঠিত। তাজউদ্দীন আহমদের (পৃষ্ঠাঃ ১৭) জন্মভূমি বৃহত্তর ঢাকার গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ায়। প্রাচীনকালে এ অঞ্চলে কার্পাস তুলা জন্মাত। তাই কার্পাস থেকে কাপাসিয়া থানার নামকরণ হয়েছে। বারভূঁইয়া-গাজীদের নামে গাজীপুর জেলা। তাজউদ্দীন আহমদ একই সাথে বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহের অধিবাসী। ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার নিগুয়ারী গ্রামে তাদের আদি বাসস্থান। নিগুয়ারী গ্রামের খাঁ পরিবারের ইব্রাহিম খান বিবাহ করে উনিশ শতকের শেষভাগে কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে আসেন। তাজউদ্দীন আহমদের দাদার পুরাতন বাড়ি নিগুয়ারী গ্রাম থেকে দরদারিয়া গ্রামের দূরত্ব ৬ মাইল। বানার নদীর উত্তর পাড়ে নিগুয়ারী এবং দক্ষিণ পাড়ে কাপাসিয়া। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদী বানার। বানার নদী কাওরাইদ ও শীতলক্ষ্যা নাম ধারণ করে নারায়ণগঞ্জ হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। কাপাসিয়া থানার উত্তর-পূর্ব দিয়ে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্রবাহিত । শীতলক্ষ্যা নদীর উত্তর পাড়ে দরদরিয়া এবং দক্ষিণ পাড়ে কাপাসিয়া উপজেলার সদর দপ্তর।
কাপাসিয়া উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন এবং ২৩১টি গ্রাম। শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে ৩টি এবং পূর্ব পাড়ে ৮টি ইউনিয়ন। কাপাসিয়ার বানার ও শীতলক্ষ্যা নদীর সাথে তাজউদ্দীনের সম্পর্ক শিশুকাল হতে। নদীতে সাঁতার কাটা, মাছধরা তার নেশা ছিল। নদীর পাড়ে গভীর গজারী বনের সাথে নিবিড় সম্পর্ক ছিল। কাপাসিয়ার বনের মালিক কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। সর্বপরি শিশুকাল থেকে এ অঞ্চলের মানুষের সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক ছিল।
তাজউদ্দীন আহমদের বংশ তালিকা
পূর্ব পুরুষ দিল্লির অধিবাসী
মােগল সম্রাটের কর্মকর্তা
ইসলাম প্রচারে বাংলায় আগমন
ময়মনসিংহের গফরগাঁয়ের নিগুয়ারী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন
ইব্রাহিম খান
(জন্ম : গফরগায়ের নিগুয়ারী গ্রামে)
মুহাম্মদ ইয়াসিন খান
(জন্ম : কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে)
(পৃষ্ঠাঃ ১৮) মুহাম্মদ ইয়াসিন খান
(জন্ম : কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে)
ওয়াজিউদ্দীন, তাজউদ্দীন আহমদ, মফিজ উদ্দীন, আফসার উদ্দীন, ৬ কন্যা
রিমি, রিপি, সিমি, এক পুত্র সােহেল তাজ

তাজউদ্দীন আহমেদ ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই বর্তমান গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলভী মুহাম্মদ ইয়াসিন খান এবং মাতার নাম মেহেরুন্নেসা খানম। তারা চার ভাই, ৫ বােন। তাজউদ্দীন আহমদের পিতা কৃষিভূমি ও বনের মালিক ছিলেন।

Reference: প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, p 17-18