২২ মার্চ ১৯৭১ | অবসরপ্রাপ্ত বাঙালী সেনা অফিসারদের সমাবেশ ও পরবর্তী ঘটনা
কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়ােগ দেন। ২২ মার্চ অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা বায়তুল মােকাররমে একটি বিরাট সমাবেশ করেন। সেখানে তারা কর্নেল ওসমানীর কাছে দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে তাঁদের করণীয় সম্পর্কে জানতে চান। কর্নেল ওসমানী তাঁদের বললেন, “চিন্তা করাে না। আমরা অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে ট্যাংক প্রতিহত করব।’ অর্থাৎ, ওসমানী সাহেব সৈনিকদের বােঝাতে চাচ্ছিলেন যে অসহযােগ আন্দোলনের মাধ্যমে তারা পাকিস্তানি বাহিনীর সামরিক তৎপরতা থামিয়ে দেবেন। তার এই কথা শুনে বাঙালি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকেরা হতাশ হন। পাকিস্তানিরা যেখানে ব্যাপক সামরিক শক্তি গড়ে তুলছে, সেখানে এ ধরনের কথা তাদের আশ্বস্ত করতে পারেনি। এদিনের সমাবেশে মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ইসফাকুল মজিদ বলেছিলেন, ‘আমরা সৈনিক। কথার চাইতে কাজে বিশ্বাস করি।’ জেনারেল মজিদ একমাত্র বাঙালি, যিনি ইংল্যান্ডের রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্ডস থেকে ১৯২৪ সালে কিংস কমিশন পেয়েছিলেন। এ সময় হাতেগােনা মাত্র কয়েকজন ভারতীয় স্যান্ডহার্ডস থেকে কিংস কমিশন পেয়েছিলেন। তিনি ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানেরও জ্যেষ্ঠ ছিলেন। এদিন অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সামরিক সদস্যদের পক্ষ থেকে আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে জেনারেল মজিদসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা শেখ মুজিবকে একটি তরবারি উপহার দেন। এ ঘটনার দুই দিন আগে, অর্থাৎ ২০ মার্চ নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের একজন বঙ্গবন্ধুকে বলেন, হে বঙ্গবন্ধু, বাংলার স্বাধীনতা কী করে আদায় করতে হয়, তা আমরা জানি। শুধু আপনি আমাদের পাশে থাকুন। আমাদের নেতৃত্ব দিন।’ এই সংবাদগুলাে সে সময়ের পত্রপত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছিল। তবু রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে কোনাে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
Reference: ১৯৭১ ভেতরে বাইরে – এ কে খন্দকার, p 37-38