১১ মার্চ ১৯৭১ঃ আজকের এদিনে
দশম দিনে আন্দোলন
এদিন হরতালের আওতা আরও শিথিল করা হয়।
৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবের আহ্বান এবং গতকাল স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের হুমকির পর সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবন সহ সকল সরকারি ও আধাসরকারি ভবন ও সাধারন বাসগৃহের শীর্ষে কালো পতাকা উড়তে থাকে। রিক্সা বেবি ট্যাক্সি মোটর কারেও উড়ছে কালো পতাকা।
সংগ্রামী জনতা সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। সিলেটে রেশন নেয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেয়া হয়। যশোরে ও অনুরূপ ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লা কারাগারে কয়েদীরা পালাবার চেষ্টা কালে পুলিশের গুলীতে নিহত হয় ৫ জন। ২ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। আহত হয় ২০০ জন। বরিশালে জেল থেকে ২৪ কয়েদী পালিয়ে গেছে। আহতদের ১০ জন কে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের একজন কয়েদীদের আক্রমনে নিহত হয়। সে কারা রক্ষীদের পক্ষ নিয়েছিল।
বরিশালে জেল থেকে কয়েদীদের পালানোর সময় পুলিশ গুলি করলে এক বালক গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
আন্তঃ আঞ্চলিক বাণিজ্য বন্ধ থাকায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিউজপ্রিন্ট সরবরাহ না থাকায় পত্রিকা গুলি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ হচ্ছে।
রংপুর শহরে সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
আর্থিক লেনদেন বন্ধ থাকায় পশ্চিম পাকিস্তানী ব্যাবসায়ীগন প্রচণ্ড অর্থাভাবে আছেন। করাচী বনিক সমিতি এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট এর হস্তক্ষেপ দাবী করেছেন। নারায়ণগঞ্জের প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা প্রদর্শনের পর জয়বাংলা বাংলার জয় গানটি শুনানো হচ্ছে।
জমিয়তে উলামা ইসলাম প্রাদেশিক শাখা অসহযোগ আন্দোলনে তাদের সমর্থন ঘোষণা করে।
ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রতিদিন ১০ জন করে ঢাকা মেডিকেলের ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দান করছে।
চট্টগ্রামে মা বোনদের বিশাল একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিন করে।
রাজশাহীতে বুদ্ধিজীবীরা শোক মিছিল করে এবং স্থানীয় সুরবাণী স্কুলে সভায় মিলিত হয়।
ন্যাপ ভাসানী নেতা ক্যাপ্টেন শামসুল ইসলাম তার তমঘা ই খিদমত বর্জন করেছেন।
নারায়নগঞ্জ কারাগারে কয়েদীদের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করার কারনে কয়েদীরা জেলের ভিতর বিক্ষোভ করেছে।
কতক সংগঠন রেসকোর্সে শেখ মুজিবের ঘোষণা এবং দাবীকে অভিনন্দন জানিয়েছে তারা হল জমিয়তে ইসলামের পূর্ব পাকিস্তান সভাপতি মওলানা শামসুদ্দিন কাসেমি।
পূর্ব পাকিস্তান ফেডারেশন অফ লেবার এর সাধারন সম্পাদক দিনেশ সেন। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন।
চট্টগ্রামে মহিলাদের একটি জঙ্গি মিছিল বের করা হয়। মিছিলের মহিলারা লাঠি বহন করে।
পিআইএ এর আসন খালি থাকা সত্ত্বেও বাঙ্গালীদের দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না।
গন আন্দোলনে জন জীবন এক অভাবনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে – তাজউদ্দীন আহমেদ
আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেছেন গন আন্দোলনে জন জীবন এক অভাবনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। জনগন চিন্তায় ও কর্মে এই সংগ্রামকে আপন করে নিয়েছে বলেই আন্দোলন এ পর্যায়ে পৌঁছতে পেড়েছে। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াকে জনগন একটি পবিত্র কর্তব্য মনে করছে। বাংলাদেশের নামে শেখ মুজিব যে নির্দেশাবলী জারী করেছেন তারা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন বলেই আন্দোলন এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। জীবনের সকল স্তরে বাংলাদেশের মানুষ যে গভীর দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে তারা সকলের জন্য প্রেরনা হয়ে রয়েছে। তিনি বলেন জন বিরোধী গোষ্ঠী আমাদের ক্ষুধার্ত রাখতে নানা ফন্দি ফিকির করছে তাই এ অবস্থা মোকাবেলার স্বার্থে উৎপাদন বাড়ানো এবং সর্বস্তরে কৃচ্ছতা সাধনের জন্য তিনি জনগনের প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি নির্দেশাবলীর কিছু সংশোধনী প্রকাশ করেন।
রাজশাহীতে কামরুজ্জামান
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান রাজশাহী ভুবন মোহন পার্কে এক জনসভায় বলেছেন বাংলাদেশের মানুষকে যে কোন প্রকার বল পূর্বক শাসন শোষণ দুর্দশা থেকে রক্ষা করতে তার দল সংগ্রাম করে যাবে। দেশের সাড়ে সাত কোটি জনগন শেখ মুজিবের গতিশীল নেতৃত্ব এর পিছনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি সাম্প্রতিক গুলিবর্ষণের ঘটনাগুলি তদন্ত করে বেবস্থা গ্রহন এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এদেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। তিনি জনগণকে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাবার আহবান জানান। পরে তিনি একটি শোক মিছিলে অংশ নেন।
রাজশাহী বেতার কেন্দ্র সম্পর্কে তিনি বলেন এ কেন্দ্র থেকে আন্দোলন সংক্রান্ত সংবাদ ও সঙ্গীত পরিবেশন করা উচিত। তিনি বেতার কেন্দ্রের স্টাফ কর্মকর্তাদের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের প্রসংশা করেন।
তিনি পরে ঢাকা ফিরে আসেন।
মুক্তিবাহিনী গঠনের জন্য ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বান
ছাত্র ইউনিয়ন বুধবার ঢাকা শহরের বিভিন্ন পথসভায় বাংলার মুক্তি আন্দোলনের সফলতার জন্য গ্রামে গ্রামে মহল্লায় মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি এবং মুক্তিবাহিনী গঠনের জন্য আহ্বান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিকেল ৪ টায় এই পথ সভা শুরু হয়। সভা গুলোতে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সলিমুল্লাহ হল সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, রোকেয়া হল ভিপি আয়েশা খানম, কাজী রোকেয়া সুলতানা, মিস মিনু।
এদিন বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে তারা কুচকাওয়াজের আয়োজন করে। কুচকাওয়াজে ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দু শতাধিক ছাত্র ছাত্রী অংশ গ্রহন করে। এখন থেকে প্রতিদিন সকাল নয়টায় এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।
টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানী ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম পরিচালনা করার আহবান
টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় ন্যাপ প্রধান মওলানা ভাসানী বলেন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ভেদাভেদ থাকা উচিত হবে না। তিনি সর্বস্তরের জনগণকে একত্রিত হয়ে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম পরিচালনা করার আহবান জানান। বাঙ্গালীদের এখন আপোষ করার দিন আর নেই। শেখ মুজিব ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান সাতকোটি বাঙালির নেতা। নেতার নির্দেশ পালন করুন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই সাথে হয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করুন।