You dont have javascript enabled! Please enable it!

প্রসঙ্গে মিঃ গারভের আবিষ্কার

সাম্রাজ্যবাদীরা দীর্ঘদিন যাবৎ বাঙলাদেশের ঘটনাবলীকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে বর্ণনা করেছে। সেই চেষ্টার এখনও অবসান ঘটেনি। ভারতে বৃটিশ হাই কমিশনার স্যার টিরেন্স গারভে কলকাতা বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের কাছে বলেছন, বাঙলাদেশের সমস্যা পাকিস্তান সরকার ও তাদেরই জনগণের একটা আংশিক সমস্যা। অতএব পূর্বাঙলার মানুষ এবং পাকিস্তান সরকারই সেই সমস্যার সমাধান করবে। এটা আদৌ আন্তর্জাতিক সমস্যা নয়।
মিঃ গারভে-র বক্তব্যের মূল কথাই হল বাঙলাদেশ নিয়ে এত হৈ চৈ কেন, ওদের সমস্যা ওরাই সমাধান করবে। মিঃ গারভে-র উদ্দেশ্য হল বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে বিশ্বের মানুষের এবং সমাজতান্ত্রিক দেশের সমর্থন থেকে বঞ্চিত করা। বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে ধ্বংস করার জন্য নয়া উপনিবেশবাদের জঘন্য প্রচষ্টোই বাঙলাদেশের সমস্যাকে আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত করেছে। সাম্রাজ্যবাদ ও নয়। উপনিবেশবাদ কোনাে স্বাধীন দেশের উপর আক্রমণ করলে বা কোনাে জাতির মুক্তিসংগ্রামকে দমন করলে তখনই তা আন্তর্জাতিক রূপ পরিগ্রহ করে। মিঃ গারভে-র বক্তব্যের থেকে মনে করার সঙ্গত কারণ আছে যে, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ এশিয়াও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এশিয়াও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ঘৃণ্য চক্রান্তকে গােপন করতে চায়।
বাঙলাদেশের সমস্যাকে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব সম্পন্ন করে তুলেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদ। বাঙলার মুক্তি সংগ্রাম ধ্বংস করার জন্য মার্কিন সরকারই ইয়াহিয়া সরকারকে অস্ত্র সাহায্য থেকে এখনও বিরত হয় নি। এখনও পাক ফৌজের জন্য মার্কিন হেলিকপ্টার পাঠান হচ্ছে। মিঃ গারভে যদি বাঙলাদেশের সমস্যাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে মনে করেন তাহলে পাকিস্তান সরকারকে মার্কিন সাহায্য দানের সম্পর্কে তিনি নীরব কেন?
যতকাল নয়া-উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবাদ জীবিত থাকবে এবং অন্য দেশের স্বাধীনতার উপর আক্রমণ চালাবে বা হস্তক্ষেপ করবে তখনই সেই আক্রান্ত দেশের সমস্যা আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত হবে এবং এই কারণে বিশ্বের জনমত সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেও আক্রান্ত দেশের পক্ষেই দৃঢ়ভাবে দণ্ডায়মান হবে। এর নামই আন্তর্জাতিকতাবাদ। আজ পুঁজি যেমন…প্রশাসনের অপচয় রােধ করতে পারলে ভালাে। কিন্তু বাজার দর রােধ না করতে পারলে সমস্যাটা যে প্রকট হয়েই থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীরা পেটে গামছা বেঁধে কতদিন কাজ করতে পারবেন? পরিসংখ্যানের মারপ্যাচে তাদের মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। বাজারদর যখন সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২১৮ পয়েন্ট ছিল তখন অস্থায়ী মহার্ঘভাতা বাড়ানাে হয়েছিলাে সেটা গিয়ে ২২৮ পয়েন্টে না পৌঁছলে মহার্ঘভাতা আর নাকি বাড়ানাে যাবে না। সরকারী মতে এখন বাজারদর ২২৭ দশমিক ৩ পয়েন্টে। বাকী ৭ দশমিক। কাজেই ভদ্রলােকের এককথা। ৭ দশমিক বেড়ে ২২৮ পয়েন্ট না হলে মহার্ঘভাতা বাড়ানাে যায় কেমন করে? সরকারের সঙ্গে বােধহয় মুনাফাবাজরা রফা করেই এমনভাবে বাজারদর বাড়িয়েছে যাতে সরকারী কর্মচারীদের ভাগ্যে আর বেশি মহার্ঘভাতা না জোটে। মুনাফাবাজরা বাজারদর আরাে ৬ দশমিক অনায়াসেই বাড়াতে পারে ; তাতে সরকার বেকায়দায় পড়বেন না। ২২৭ দশমিক ৯ হলেও তাে সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে মহার্ঘভাতা চড়ায় আটকেই থাকবে।
আয়কর যারা বাকী ফেলে তাদেরও প্রায় ঢিট করে এনেছেন চ্যবন সাহেব। ১৯৭০ সালের মার্চে বকেয়া আয়করের পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি টাকা ১৯৭১ সালের মার্চে তা এসে দাঁড়িয়েছে ৪৯৯ কোটি টাকায়। এ কি কম কৃতিত্বের কথা? এত আদাজল খেয়ে তবে এক কোটি টাকা বকেয়া কর কমাননা গেছে। চ্যবন সাহেব ভালাে তহশীলদার বলতে হবে। এর জন্য তাঁর ভারতরত্ন— খেতাব পাওয়া উচিত।

সূত্র: কালান্তর, ১৮.১০.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!