২৭ আশ্বিন ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ১৪ অক্টোবর ১৯৭১
-ওলান্দাজ প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে ঘোষণা করে যে তাঁর দেশ পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে। গত জুনের পর নতুন ঋণের চুক্তি স্বাক্ষর করে নাই।
-আজাদ হিন্দু ফৌজের ২৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে প্রেরিত একবাণীতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবনী বাংলাদেশ চুক্তি বাহিনীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। নেতাজীর লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে মাতৃভূমির মুক্তি আনায়ন। সুতুরাং বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব আমরা আজ যে ধরনের সশস্ত্র সংগ্রামে নিয়াজির রয়েছি তাঁর সাথে নেতাজীর সংগ্রামের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। (সাপ্তাহিক জয় বংলা ২৯-১০-৭১)
-ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বেলগাঁওয়ে এক জনসভায় বলেন, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করবে না। তবে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যে ভারত প্রস্তুত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে উদ্ধাস্তুরা অবশ্যই নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে স্বদেশ ফিরে যাবেন। বানলাদেশ সংকট নিরসন-কল্পে যে কোন রাজনৈতিক সমাধান আওয়ামী লীগের কাছে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
-পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ইরান যাত্রা।
-১ম ও ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট তাঁদের নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে মেজর দত্তের নেতৃত্বাধীন সেক্ট ৪ যোগ দেয়। এই রেজিমেন্ট প্রবল মনবলের সঙ্গে লড়াই করে কেজুরীছড়া, সাগর নালা দখল করে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, মুজিবনগরে, জনাব আনোয়ারুল হক খানকে প্রেস, তথ্য, বেতার ও চলচ্চিত্র বিষয়ক সচিবের দায়িত্ব অর্পন করেন। স্বাধীন বাংলা বেতআর কেন্দ্রের প্রচারনীতি নিদ্ধারণী সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপদেষ্টা আব্দুল মান্নান এম এন এ ছাড়া উপস্থিত থাকতেন সর্বজনাব শিল্পী কামরুল হাসান, ছিত্র পরিচালক আব্দুল জাব্বার খান, আলমগীর কবির, চরমপত্র লেখক-পাঠক এম আর আখতার (মুকুল)। উল্লেখ্য জনাব আলমগী কবির ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইংরেজী অনুষ্ঠানের অন্যতম সংগঠক।
-পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভূট্টোর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্রের অন্যতম প্রণেতা ও প্রেসিডেন্টের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা বিচারপতি এ আর কনেলিয়াস পদত্যাগ পত্র পেশ করেন।
-টঙ্গী ও ধীরাশ্রমের মধ্যবর্তী রেললাইন মুক্তিবাহিনী উড়িয়ে দেয়।
-কলকাতার নিকটবর্তী একটি শরণার্থী শিবির থেকে প্রাভদার সংবাদদাতা জানায়, শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রয়োজন। উল্লেখ্য শ্রীমতী গান্ধীর গতকাল মস্কো সফরের পর থেকে বেশ ক’জন রুশীর সাংবাদিক শরণার্থী শিবিরের পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়।
নগরকান্দা (ফরিদপুর) থানার বীর মুক্তিযোদ্ধারা চারটি দলে বিভক্ত হয়ে থানা সদর দপ্তর আক্রমণ করে। এই সব দলগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠন হাবিলদার আজিজ মোল্লার দল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফের দল, অকুতোভয় তরুণ মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক আবু শহীদের দল এবং সোলায়ামানের দল। সব মিলে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা থানা আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে রাজাকার ৫ জন নিহত হয় এবং দালালা দারোগাকে ব্যাংকার থেকে নিত্য গোপন নামে এক দুর্দান্ত সাহসী যোদ্ধা দারোগার আত্মহত্যার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে তাঁকে ধরে ফেলে। তালমা সহ অন্যান্য এলাকায় রাজাকারা শহরে আশ্রয় নেন। উল্লেখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফের দলে অধিকাংশ তরুণ প্রশিক্ষিত যোদ্ধা ছিল। তারা পরে হাটকৃষ্ণপুর অপারেশন করেন। হাইকৃষ্ণপুরের অপারেশনে সহকমাণ্ডার শাহাজাহান শহীদ হন।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী