You dont have javascript enabled! Please enable it! কে এম (খান মােহাম্মদ) শেহাবুদ্দিন (পিএফএস ১৯৬৪) ও আমজাদুল হক (এক্স-ক্যাডার ১৯৬৭) - সংগ্রামের নোটবুক

কে এম (খান মােহাম্মদ) শেহাবুদ্দিন (পিএফএস ১৯৬৪)

ও আমজাদুল হক (এক্স-ক্যাডার ১৯৬৭)

দু’জনই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনে চাকুরিরত ছিলেন- প্রথমজন দ্বিতীয় সচিব (Second Secretary) এবং অপরজন সহকারী প্রেস অ্যাটাশে (Assistant Press Attache)। পদ থেকেই অনুমেয় চাকুরিতে ও বয়সে দু’জনই ছিলেন নবীন, কূটনীতিজ্ঞানে তাদের স্বপেশার বয়ােজ্যেষ্ঠদের তুলনায় নিতান্ত অনভিজ্ঞ। সম্ভবত একারণেই জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্তগ্রহণের সময়ে ঝুঁকি নিতে এতটুকু বুক কাঁপেনি তাদের। বস্তুত সবদেশে সবকালে তরুণেরা বরাবর যেটা করে- এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

প্রসঙ্গত প্রয়াত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বক্তব্য উদ্ধার করে দেখি এ দু’জন সেদিন কী করেছিলেন! জনাব চৌধুরীর ভাষায়: “.৬ই এপ্রিল পাকিস্তানের দু’জন কূটনৈতিক অফিসার পাকিস্তানের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তারা হলেন খান মােহাম্মদ শিহাবউদ্দিন এবং আমজাদুল হক। এরা দু’জনেই বাঙালী। শিহাবউদ্দিন দিল্লীর পাকিস্তানী দূতাবাসের সেকেণ্ড সেক্রেটারী আর আমজাদুল হক প্রেস এ্যাটাচী ছিলেন। এদের আগে আর কোনাে সরকারী কর্মচারী পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেননি।.. ৬ই এপ্রিল রাতে ইয়র্ক থেকে ফিরে হঠাৎ দিল্লী রেডিও থেকে শিহাবউদ্দিন ও আমজাদুল হকের

পৃষ্ঠাঃ ১৮৫

কণ্ঠেই স্বাধীনতা সংগ্রামে যােগদানের কথা শুনলাম ।.. তাদের দেশপ্রেম ও সাহসিকতা অন্য কূটনীতিবিদদের অনুপ্রেরণা যােগায়।”৬

প্রকৃতই তা ছিল যুগপৎ দুঃসাহসিক ও দৃষ্টান্তস্থাপনকারী ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তার সগােত্রীয়দের পরে বিপুলভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল কোনােপ্রকার অগ্র-পশ্চাৎ না-ভেবে যুগের অমােঘ আহ্বানে সাড়া দিতে। কে. এম. শাহাবুদ্দিন তাঁর আত্মকথা There and Back Again: A Diptotat’s Tale-এ পাকিস্তানপক্ষ ত্যাগের কারণ ও সুমহান উদ্দেশ্য সম্বন্ধে নিজেই লিখেছেন: ” I spent four years in New Delhi (June 1968-May 1972) and it was during this period that I found myself confronted with the most critical decision of my life… On 6 April 1971, in protest against Pakistan’s heinous actions, I formally resigned from the Pakistan Foreign Service and left the Pakistani High Commission in New Delhi to open the diplomatic front of Bangladesh’s Liberation War. No Bangladesh government had yet been set up, neither in Dhaka nor in exile. As the first East Pakistani PFS officer to join the liberation movement and as the first head of the first Bangladeshi mission overseas, I had the opportunity to witness and, in my own humble way, contribute to nothing less than the making of a new country, a new government, a new state, and the establishment of this new country’s foreign policy and external relations.”৭

যথার্থই বলেছেন তিনি। তখনও মুজিবনগর, প্রবাসী বা অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার- যেটাই বলা হােক না কেন সেরকম কোনাে কর্তৃপক্ষ বা সরকার গঠিত হয়নি। তাদের সহকর্মীদের মধ্যে পৃথিবীর অন্যত্র চাকুরিরত যারা তাদেরও কেউ আগে কখনও এই ধরনের আপাত অবিমৃষ্যকারিতার অর্থাৎ স্বেচ্ছায় অতিলােভনীয় চাকুরি ত্যাগের নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছে বলে শােনা যায়নি। ফলে তাদের এই ভূমিকা নিঃসন্দেহে অবিস্মরণীয়।

Source: মুক্তিযুদ্ধে সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসারদের ভূমিকা