দুঃখের বিচিত্রতা – সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি
অক্সফোম রিপোর্ট, ২১ অক্টোবর ১৯৭১
সম্পূর্ণ অবস্থা এখনো সারা বিশ্ব দেখেনি। আমি আপনাদের এটি বলতে পারি যে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি নিজ চোখ না দেখবেন ততক্ষণ এর তীব্রতা বুঝতে পারবেন না। শুধুমাত্র এইখানে অবস্থান করে আপনি মানুষগুলোর অনুভূতি এবং অঙ্গীকার উপলব্ধি করতে পারবেন, এবং সহিংসতার তীব্রতা যা শরনার্থী তৈরিতে এবং বেসামরিকের হতাহতের সংখ্যা বাড়াতে বলবৎ রয়েছে।
ভারতে আমি শরনার্থী এলাকা পরিদর্শন করেছি কলকাতা হতে পূর্ব বাংলা সীমানা জুড়ে এবং পশ্চিমে পশ্চিম বাংলা থেকে জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং শহরে উত্তর হতে পশ্চিমের ত্রিপুরা রাজ্যের আগারতলা পর্যন্ত।
ঢাকার দক্ষিণে অবস্থিত বরিশাল এবং খুলনা জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নেমে আসে বীভৎস বর্বরচিত অত্যাচার।
আবালবৃদ্ধবনিতা দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পায়নি,তাদেরকে অনিশ্চিত ভাগ্যের বিড়ম্বনায় রাস্তার ধারে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে বিচরণ করতে দেখা গেছে।পাকিস্তানের সৈন্য ও তাদের দোসর বা সহযোগী দালালদের অবর্ণনীয় অত্যাচার যেমন অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ,লুটপাট,নিপীড়ন,হত্যা’র মতো বীভৎস ঘটনা এদের মুখে বলতে শোনা গেছে।রাস্তার ধারে অনেক শিশুকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং তাদের পিতামাতাকে সাহায্যের জন্য রাস্তায় হাতবাড়াতে দেখা গেছে।মৌসুমী বৃষ্টিপাত ও প্রাকৃতিক আনুষঙ্গিক দুর্যোগ থেকেও তারা রেহাই পায়নি।যারা এ অবস্থা দেখেছে তারা ভেবেছে আরও কতদিন,আরও কত রাত বিশ্রামহীন,আশ্রয়হীন,খাদ্যহীন অবস্থায় এদের পাড়ি দিতে হবে।
একটি পঙ্গু শিশু যে নাকি জীবনে আর হাঁটতে পারবেনা তার অসহায় চাওনি এবং ছোট তাঁবুর নিচে মাদুরে শুয়ে থাকা ভীতসন্ত্রস্ত শিশুটি দেখছে তার মা বাবা ভাই বোনের করুণ মৃত্যু- এমন দৃশ্য কখনো মন থেকে মুছে ফেলা যাবেনা।আমরা পৌঁছার কয়েক মুহুর্ত পূর্বে কলেরায় মৃত ছোট শিশুটির গায়ে ঢাকবার মতো একখন্ড কাপড়েরও ব্যবস্থা করতে পাচ্ছেনা তার দশবছর বয়সী বোনটি।যখন আমি শরণার্থী শিবিরের একজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করি তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কিসের,তখন তিনি জবাব দিলেন তার প্রধান জরুরী প্রয়োজন হলো মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা।তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ একটি শরণার্থী শিবিরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এই স্থানটি মূলত নিম্ন এবং মধ্য আয়ের লোকদের আবাসস্থল হওয়ার কথা ছিলো।এখন তা এক লক্ষ সত্তর হাজার শরণার্থীদের আশ্রয়স্থল।
পূর্ববাংলার এই করুণচিত্র শুধুমাত্র পাকিস্তানের বা ভারতের ছিলোনা,এই করুণচিত্রটি ছিলো সারা বিশ্বের। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সমস্ত বিশ্বের মানবসম্প্রদায়ের যৌথ উদ্যোগ।
সাধারণ মানবতার দাবি আমেরিকা এবং সম্মিলিত জাতিসংঘের।এ সত্য মেনে নেওয়া উচিৎ যে এ সমস্যাটা শুধু ভারতের নয়,এটা সমগ্র মানবসম্প্রদায়ের একটি দায়িত্ব।
সূত্র – বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর ষাট ব্যক্তির প্রতিবেদন, অক্সফোম রিপোর্ট, ২১ অক্টোবর ১৯৭১