You dont have javascript enabled! Please enable it!

        ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ৮ তারিখে বাটিয়া মারা গ্রামে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা এসে আশ্রয় নেয়। মিলিটারীদের ক্যাম্প ছিল কুমারখালী থানা কাউন্সিলে, আর রাজাকার বাহিনী ও মিলিশিয়াদের ক্যাম্প ছিল কুমারখালি রেল ষ্টেশনে। পাক সেনাদের মেজর ও ক্যাপ্টেন থাকতো কুমার খালী থানা ডাক বাংলোয়।

৮ ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর দল সকাল ৮/১০ টার সময় মণ্টুদের ঘরের মধ্যে ভাত খাচ্ছিলো।  এমন সময় রাজাকার, মিলিটারী ও মিলিশিয়া মিলে প্রায় ৬০/৭০ জনের বাহিনী বাটিয়া মারা মণ্টুদের বাড়ী চতুর্দিকে হতে ঘিরে নিয়ে গোলাগুলি শুরু করে এবং মুক্তি বাহিনীর প্রস্তুতি নেবার পূর্বেই পাক হানাদার বাহিনী এসে তাদেরকে হাতিয়ার সমেত ধরে ফেলে ও পরে তাদেরকে প্রহার করতে করতে থানা কাউন্সিলে নিয়ে যায়। থানা কাউন্সিলের পূর্ব দিকে একটা আম বাগানে গর্ত করে রাত্রি ৮ টার সময় তাদেরকে সেখানে নিয়ে গিয়ে লাইন করে দাঁড় করিয়ে মেশিন গানের গুলিতে হত্যা করে উক্ত গর্তের মধ্যে ফেলে মাটিচাপা দিয়ে রেখে চলে আসে।

তার পরদিন পাক হানাদার বাহিনী বাটিয়ামারা গ্রামে যায় এবং উক্ত গ্রামের প্রত্যেকটা বাড়ি আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মেয়েদের উপর চালায় পাশবিক অত্যাচার। আবার তারা থানা কাউন্সিলে ফিরে আসে। আজও বাটিয়ামারার অনেক বাড়িতে ঘর উঠে নাই।

তার ৪/৫ দিন পর পাক বাহিনী কল্যাণপুর গ্রামে অপারেশনে যায় এবং নাম না জানা অনেক মেয়ের উপর পাশবিক অত্যাচার করে। তার মধ্যে কল্যাণপুরের একটা মেয়ের নাম আছিয়া। মেয়েটি অবিবাহিতা যুবতি ও সুন্দরী। সেই মেয়েটি পাক হানাদার বাহিনীর শিকার হয় এবং তার উপর পাশবিক অত্যাচার চালানোর দরুন সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পাক হানাদার বাহিনী সেই গ্রাম হতে কুমারখালী চলে আসলে সে জ্ঞান ফিরে পায় এবং তার কলঙ্কিত মুখ সমাজে দেখাবে না বলে রাত্রি কালে গলায় দড়ি দিয়ে মারা যায়।

পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন থানা কাউন্সিলের যে ডাক বাংলোয় থাকতো সেই ডাক বাংলোর সম্মুখে একটি কচুরীপানায় ভর্তি পুকুর ছিল। সেই পুকুরে প্রায় ২/৪ দিন পর পর ২/৪ টা সুন্দরী মহিলার লাশ শাড়ি পরা অবস্থায় ভাসতে দেখা যেত।

আমাদের অনুমান এই যে গাড়ীতে যে সকল মহিলা চলাফেরা করতো তাদেরকে গাড়ী হতে নামিয়ে ডাক বাংলোয় নিয়ে এসে তাদের উপর পাশবিক অত্যাচার করে পরে বেয়োনেট চার্জ করে হত্যা করে উক্ত পুকুরে ফেলে রাখতো।

একদিন দু’জন মিলিটারী একটা রাজাকার কে বলছে, আচ্ছা দোস্ত আওরাত মিলিয়ে দাও না। তখন রাজাকারটা তাদেরকে একটা বাড়ীতে নিয়ে যায়। মিলিটারীদের খবর পেয়ে উক্ত বাড়ীর পুরুষ মহিলা সবাই বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। রাজাকার ও মিলিটারী দুটি উক্ত বাড়ীর মধ্যে ঢুকে আর কোন লোক খুঁজে পায় না। তখন মিলিটারী দুটি উক্ত রাজাকারকে বলে আচ্ছা দোস্ত তোমার ডেরা কোথায়?  তখন রাজাকারটা তাদেরকে সাথে নিয়ে নিজ বাড়ী যায় এবং পাক সেনারা তার বাড়ি গিয়েই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তারা দেখতে পায়, ঘরের মধ্যে উক্ত রাজাকারের মাতা বসে আছে। তারপর একজন পাক সেনা ঘরের বাইরে চলে আসে এবং উক্ত রাজাকারের বুকে রাইফেল ধরে রাখে। আর একজন পাক সেনা তার বৃদ্ধা মাতার উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। তারপর দ্বিতীয় জন গিয়ে পাশবিক অত্যাচার করে। প্রথম জন এসে রাজাকারকে পাহারা দিতে থাকে। তারপর তাদের কাজ শেষ হলে তারা ক্যাম্পে চলে আসে। পরে উক্ত সংবাদ রাজাকার ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়লে উক্ত রাজাকার আর ক্যাম্পে না গিয়ে কোথায় যে চলে গেল তার আর কোন খোঁজ পাওয়া গেল না। উক্ত ঘটনা হতে জানা যায় যে পাক সেনাদের হাত থেকে তাদের আত্নীয় বা বন্ধুদের স্ত্রী, মা, বোন ও মেয়েরা রেহাই পায়নি। এমনকি শান্তি কমিটি জামাতে ইসলামী বা মুসলিম লীগের লোকেরাও না।

স্বাক্ষর।।-

মোঃ খন্দকার নূরুল ইসলাম
গ্রাম- বাটিয়ামারা
থানা- কুমারখালী,
জেলা- কুষ্টিয়া

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!