২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ঃ একনজরে এদিন
আজ মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে পুলিশের গুলী বর্ষণের বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি দ্বারা তদন্ত অনুষ্ঠান এবং দায়ী বেক্তিদের বিচার দাবী করা হয়েছে। কমিটি নিহতদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আব্দুল্লাহ হেল বাকী। মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি কমিটি মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীনের প্রতি পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করেছে। বৈঠকে পুলিশের গুলিবর্ষণে ৫ বেক্তির নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। ঘটনার বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি দ্বারা তদন্ত অনুষ্ঠানের দাবী জানানো হয়। কমিটি অবিলম্বে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের দাবী জানায়।
আজও নাজিরা বাজারের কাছে পশু হাসপাতালের কাছে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে ৪ জন আহত হয়।
আগের দিনের ন্যায় আজও হরতাল পালিত হয়। আজ মাত্র ৪ টি ত্রেন চলেছে। ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে অনেক কয়লা ফেলে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত রাত ৮ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন বলবত থাকবে বলে প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়। আজ পুলিশ এবং সেনা টহল আরও বাড়ানো হয়েছে।
২১ ফেব্রুয়ারীর ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন ব্যাবস্থাপক পরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার সুপারিশ করে প্রস্তাব আনেন। মুসলিম লীগের দলত্যাগী এমএলএ আনোয়ারা খাতুন(আওয়ামী মুসলিম লীগ) কংগ্রেসের মনোরঞ্জন ধর এবং নির্দলীয় শামসুদ্দিন আহমেদ সংশোধনী প্রস্তাব আনলেও তা বাতিল হয়ে যায়। কংগ্রেসের বসন্ত কুমার দাস জনাব ধরের সংশোধনী প্রস্তাব সমর্থন করেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহন করার বিষয়ে পরিষদে সিদ্ধান্ত হলেও বিয়োগ ব্যাথার কারনে ছাত্ররা খুশী হতে পারেনি। আজও অনেক ছাত্র সলিমুল্লাহ হলে জমায়েত হয়। পরে দুপুরে এখানে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ভাইস চ্যান্সেলর ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রাও অংশ নেন। শেরে বাংলা ফজলুল হক হলে এসে ছাত্রদের শান্তি বজায় রাখার আহবান জানান এবং তাদের জানান ছাত্রদের দাবী আদায়ে তিনি ভুমিকা রাখবেন।
২১ তারিখের ঘটনার পর মুসলিম লীগ দলীয় এমপি আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন ব্যাবস্থাপক পরিষদ হতে ইস্তফা দেন।
নির্দলীয় সদস্য দুজন পরিষদে আওয়ামী মুসলিম লীগের গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন এর আহ্বায়ক হন শামসুদ্দিন আহমেদ এবং সম্পাদক হন আলী আহমদ চৌধুরী।
পরিষদ হতে ইস্তফা দানে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মওলানা তর্কবাগীশ তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারী এ বিষয়ে বিবৃতি দিবেন।
মুসলিম লীগ দলীয় এমএলএ ইউসুফ আলী মোহন মিয়া ২১ তারিখের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি নিহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবী করেন।
ময়মনসিংহে মহকুমা মুসলিম লীগের এক জনসভায় মন্ত্রীসভার পদত্যাগ দাবী করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন রফিক উদ্দিন ভুইয়া, সৈয়দ সুলতান আহমেদ বিএল, আলতাফুদ্দিন তালুকদার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি শামসুল হক, মোফাজ্জল হোসেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ফখরুদ্দীন আহমেদ। মুসলিম লীগ ময়মনসিংহে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি গঠন করে। কমিটির অপর এক বৈঠকে মন্ত্রীসভার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা হয় এবং তাদের বিচার দাবী করা হয়। কমিটি বেবস্থাপক পরিষদের সদস্যদের পদত্যাগ দাবী করা হয়।
কুমিল্লায় আজ হরতাল পালন করা হয়। শিক্ষকদের এক মিছিল হয় পরে তারা সভা করে মন্ত্রীসভা চীফ সেক্রেটারি ম্যাজিস্ট্রেট কোরায়েশির অপসারন দাবী করা হয়। সভার বক্তারা মন্ত্রীসভার ত্রিপুরার দুজন মফিজ উদ্দিন এবং টি আলীর অপসারন দাবী করে। জেলা মুসলিম লীগ সাধারন সম্পাদক আজিজুর রহমান পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন।
ঢাকায় মুসলিম ছাত্রলীগ এক জনসভায় ২১ তারিখের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। তারা ঘটনার তদন্ত ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের দাবী জানায়। কুমিল্লা এবং গাইবান্ধা মহকুমা মুসলিম লীগ সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন।
সরকার এক প্রেস নোট এ জানিয়েছে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সেনাবাহিনী জড়িত নয়।
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ডন বলেছে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের কোন আপত্তি নাই।
নারায়নগঞ্জ ও বগুড়ায় গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশ হরতাল হয়েছে। বগুড়ার আলতাফুন্নেছা মাঠে বিশাল এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।