You dont have javascript enabled! Please enable it! 1952.02.22 | একনজরে এদিন - সংগ্রামের নোটবুক

২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ঃ একনজরে এদিন

এদিনও পূর্ণ দিবস হরতাল পালন করা হয়। এদিনও সান্ধ্য আইন জারী করা হয়। আজও শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সেনাবাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল মিটফোর্ড হাসপাতালে অনেক আহত নিহতদের আনা হয়েছে। ২১ তারিখের ঘটনায় শহরের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা আদায় করা হয়েছে। সকাল ১০টায় মেডিক্যালের গায়েবানা জানাজায় এটর্নি জেনারেল শেরে বাংলা একে ফজলুল হক অংশ গ্রহন করেন। দুপুর দুটার সময় শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ঢাকা মেডিক্যাল হোস্টেলের সামনে শহীদদের এবং আহতদের জন্য দোয়া করেন। তিনটার দিকে মেডিক্যাল হোস্টেল থেকে একটি বিরাট শোভাযাত্রা হাইকোর্টের দিকে গেলে পুলিশ সেনাবাহিনী তাদের উপর আক্রমন করে। এখানে সেনাবাহিনী মেশিনগান এবং স্টেনগান ব্যাবহার করে। এখানে কয়েকজন হতাহত হয়। ছত্রভঙ্গ মিছিলের একাংশ হাইকোর্টের ভিতর আশ্রয় নেয়। অপর একাংশ ফজলুল হক হলের পাশ দিয়ে অগ্রসর হয়। মিছিলের সম্মুখ ভাগে রক্তমাখা কাপড় নিয়ে মিছিলকারীরা অগ্রসর হয়। ছত্রভঙ্গ মিছিলের একাংশ নাজিমুদ্দিন রোডের দিকে অগ্রসর হয়। মিছিলটি শান্তিপূর্ণ ভাবে চকবাজার ইসলামপুর মিটফোর্ড হয়ে জগন্নাথ কলেজে গেলে পুলিশ সেখানে তাদের লাঠিচার্জ করে। সময় স্থানীয় জনসাধারন মিছিলে অংশ নিলে মিছিলের আকার বড় হয়। দুপুর দুইটার দিকে লালবাগ থেকে আসা একটি মিছিল আজাদ অফিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় অফিসে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং কর্মচারীদের শাসানো হয়। মিছিলটি পরে পলাশী রেল ক্রসিং এর দিকে গেলে পুলিশ সেনাবাহিনী তাদের উপর আক্রমন করে।
হরতাল উপলক্ষে বিক্ষোভকারীরা নওয়াবপুর রেল ক্রসিং পিকেটিং করে। তারা সাইকেল রিক্সার হাওয়া ছেড়ে দেয় এবং গাড়ী চলাচলে বাধা দেয়। এলাকায় পুলিশের পরিবর্তে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। সেনাবাহিনী এখানে টহল দিতে থাকে। এখানে ছোট এক ঘটনায় সেনাবাহিনী মিছিলকারীদের উপর এক রাউন্ড গুলী বর্ষণ করে। এতে কেউ হতাহত হয়নি। বিকেলে মুসলিম হল থেকে একটি মিছিল পরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে মিছিলকারীরা পরে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আশ্রয় নেয়। তারা সেখানে নুরুল আমীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিকেলে মেডিক্যাল হোস্টেলের সামনে মাইক যোগে সভা চলার সময় পুলিশ আবুল হাসেম নামে এক ছাত্রকেকে বেয়নেট চার্জ করে মাইক ছিনিয়ে নেয়। ঘটনায় মেডিকেল প্রশাসন সভা ডেকে প্রতিবাদ জানায় এবং কলেজ ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ডাঃ ওয়াহেদের নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধিদল মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে প্রতিবাদ জানায়। বিকেলে একদল বিক্ষোভকারী জুবিলী প্রেস জ্বালিয়ে দেয়। জুবিলী প্রেস থেকে মর্নিং নিউজ ছাপা হত। শহরের সকল মসজিদে আজ জুমার নামাজে শহীদদের জন্য দোয়া করা হয়।
পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুল হুদা সাধারন সম্পাদক এএনএম তহমিদ উদ্দিন এবং শহর সভাপতি কাজী আওলাদ হোসেন সাধারন সম্পাদক মঞ্জুরুল হক ২১ তারিখের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
২১ তারিখের ঘটনায় এদিন সরকার একটি প্রেসনোট প্রকাশ করেন।
এদিন ২১ ফেব্রুয়ারীর ঘটনায় শহরের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
২৪ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশন বাতিল করা হয়।

এদিকে আওয়ামী মুসলিম লীগ সভাপতি মওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে জেলখানায় ১৬ ফেব্রুয়ারী থেকে অনশনরত নিরাপত্তা বন্দী দলের যুগ্ন সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমেদের স্বাস্থ্য এর অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ ছিলেন এবং তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার রোগমুক্তির পূর্বেই তাকে হাসপাতাল থেকে আবারো কারাগারে নেয়া হয়। বর্তমানে তার স্বাস্থ্য এর গুরুতর অবনতি ঘটেছে। অবস্থায় তাকে আটক রাখায় আমরা মর্মাহত হয়েছি। তিনি অবিলম্বে উভয়ের মুক্তি দাবী করেন। আরেক বিবৃতিতে তিনি ঘটনার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবী জানান।
সাবেক মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাসিম এক বিবৃতিতে জনগনের উপর নির্বিচারে পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদ করেছেন।
ব্যাবস্থাপক পরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। এতে মুসলিম লীগ দলীয় আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হসেন এবং আলী আহম্মদ সংশোধিত প্রস্তাব আনলে তা উত্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়নি।
কুমিল্লায় জহিরুল হক বিএল এর সভাপতিত্তে অনুষ্ঠিত জনসভায় ২১ তারিখের ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়। বক্তারা নুরুল আমিন সরকারের পদত্যাগ দাবী করেন। বক্তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দান এবং কুমিল্লায় মিছিলে হামলাকারী মোহাজেরদের শাস্তি দাবী করেন।
চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় ২১ তারিখের ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন রফিউদ্দিন সিদ্দিকি(?) এবং একে খান। তারা নিরীহ জনগনের উপর পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং আহত নিহতদের ক্ষতিপূরণ দাবী করেন