২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯ঃ মুক্ত মানব শেখ মুজিব
সরকার বিরোধী তীব্র আন্দোলনে সরকার রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। তিনি এদিন কুর্মিটোলা সেনানিবাসের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। বেলা ১২ টায় মুক্তি হলেও তিনি ষড়যন্ত্র মামলার আসামীদের মুক্তি পর্যন্ত জেলখানা ত্যাগ করেননি। বেগম মুজিব দুপুর একটায় ক্যান্টনমেন্টে দুপুরের খাবার নিয়ে যখন বাসা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখনি মুক্ত শেখ মুজিব বাসায় আচমকা প্রবেশ করেন। এ সময় শেখ মুজিবের সাথে ছিলেন তার আইনজীবী জুলমত আলী খান। বাসায় প্রবেশের পর বেগম মুজিব কড়া ভাষায় প্রশ্ন করেন তিনি মুক্তি নিয়ে এসেছেন কিনা। শেখ মুজিব উত্তরে মুক্তি পেয়েছেন বলে জানালে তিনি খুশী মনে আপ্যায়নের কাজে চলে যান। আগের দিন রাতে বেগম মুজিব জেলখানায় গেলে শেখ মুজিবকে ডাল রান্না করতে দেখে আসেন। তখনও তারা তার মুক্তির আভাষ পাননি। বাসায় আসার পর বাড়ীর বেলকনীতে দাড়িয়ে তিনি আগত জনতার উদ্দেশে অভিবাদন জানান। এক ফাকে তিনি বাড়ীর ছাদে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ আলোচনা করেন। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন সোহরাওয়ারদির জামাতা সুলেমান এবং মেয়ে আখতার সুলেমান। এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারী গোল টেবিল বৈঠক নির্ধারিত থাকলেও শেখ মুজিব প্যারোলে মুক্তি নিতে অস্বীকৃতি জানানোতে গোলটেবিল বৈঠক পিছিয়ে যায়।
এদিন আরও যারা মুক্তি পান তারা হলে মনি সিংহ, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, মতিয়া চৌধুরী, হাতেম আলী খান, শুধাংশু দত্ত, মন্মথ দে, অমল সেন গুপ্ত, বিমল দত্ত, মনি কৃষ্ণ সেন, নগেন সরকার, জিতেন ঘোষ, রবি নিয়োগী, ফরিদপুরের শান্তি রঞ্জন সেন গুপ্ত, সন্তোষ বেনার্জি, ঢাকার আব্দুল হালিম, জামালপুরের খন্দকার আব্দুল মালেক, টাঙ্গাইলের আব্দুর রহমান সিদ্দিকি, লতিফ সিদ্দিকি, কুমিল্লার শিব নারায়ন দাস (বাংলাদেশ পতাকার ডিজাইনার) সিলেটের ন্যাপ ভাসানী নেতা আকমল হোসেন (পরে আবার গ্রেফতার)কেএম ওবায়দুর রহমান সহ ষড়যন্ত্র মামলার সকল আসামী। মুক্তি উপলক্ষে ঢাকা শহর মিছিলের নগরীতে পরিনত হয়। কোন কোন মিছিলে ব্যান্ড পার্টির বাদ্য বাজানো হয়। দুপরের দিকে ধানমণ্ডির বাসায় আগমনের পর শেখ মুজিব একটি মিছিলে যোগ দেন। মিছিলটি শহীদ মিনার অভিমুখে রওয়ানা হয়। মিছিলটি ইডেন কলেজের কাছে এলে ছাত্রীরা তার উপর পুস্প বর্ষণ করে। মিছিলটি শহীদ মিনারে পৌছলে নার্স হোস্টেলের ছাদ থেকে শ্লোগান দেয়া হয়। শহীদ মিনারে তিনি সকল শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মোনাজাত করেন। এরপর মিছিলটি তিন নেতার মাজারে গেলে তিনি সেখানেও শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মোনাজাত করেন। এর পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান সেখানে তার মুক্তির জন্য অনশনরত ৫ ছাত্রের অনশন ভঙ্গ করান। সেখান থেকে তিনি আজিমপুর গোরস্থানে সার্জেন্ট জহুরুল হকের মাজারে মোনাজাত করেন এবং আন্দোলনে আহতদের দেখতে যান। এ সময়ে পল্টনে ২ লাখ লোক জমায়েত হয়। সেখানে তার যাওয়ার কথা থাকলেও শেখ মুজিব ক্লান্তি জনিত কারনে সেখানে যেতে পারেননি।
শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য কারামুক্ত পিপিপি সভাপতি জুলফিকার আলী ভূট্টো আগামীকাল ঢাকা আসছেন। মুক্তির পর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আজম খান, জুলফিকার আলী ভূট্টো, এয়ার মার্শাল আসগর খান, বিচারপতি মুরশেদ টেলিফোনে শেখ মুজিবের সাথে কথা বলেন।
রাত সাড়ে নয়টায় শেখ মুজিব ভাসানীর সাথে দেখা করেন। তাদের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনা হয়।