২১ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ঃ ভাষা আন্দোলন নিয়ে শেখ মুজিবের স্মৃতি রোমন্থন
ভাষ্য গ্রহনে কেজি মোস্তফা
সাক্ষাৎকারকে সংবাদ আকারে পরিবর্তিত করা হয়েছে। একই ভাষ্য আরও সংক্ষেপে অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বর্ণিত আছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য এক সাক্ষাৎকারে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন ভাষা আন্দোলনের শুরু ১৯৪৭ সালে এর বিকাশ ৬১-৬৯ এবং পরিনতি ১৯৭১। ১৯৪৭ সালের ৩রা জুন ভারত বিভাগের ঘোষণার সাথে সাথে শেখ মুজিব কলকাতার সিরাজুদ্দউলা হলে ছাত্র নেতাদের এক কনভেনশন ডেকেছিলেন। ৩রা জুনের পর বাংলা ভাগের পর শেখ মুজিব পাকিস্তানের কাঠামোয় বাঙ্গালির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন রাজধানী সহ সব কিছুই পশ্চিম পাকিস্তানে স্থাপন করা হচ্ছিল। জনগন তখন তত সজাগ ছিল না। সে ছাত্র সমাবেশে শেখ মুজিব আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন কিছু একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বাংলাদেশকে কলোনি করা হবে। বাংলার মানুষের উপর আঘাত করা হবে। এ স্বাধীনতা সত্যিকারের স্বাধীনতা নয়। তিনি বলেছিলেন আমাদের নতুন করে আবার স্বাধীনতার সংগ্রাম করতে হবে। কেজি মোস্তফা সে সভায় উপস্থিত ছিলেন। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে লেখাপড়া বাদ দিয়ে শেখ মুজিব আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলন করতে গিয়ে ১১ মার্চ সচিবালয়ের দক্ষিন গেটে তিনি গ্রেফতার হলেন। ১৫ মার্চ মুক্তি পেয়ে ১৬ মার্চ থেকে আবারো আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের জন্যই বিরোধী দলহীন এ প্রদেশে তিনি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। খবর আসে জিন্নাহ ২১ বা ২২ তারিখে ঢাকা আসবেন এর মধ্যে তিনি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। যখন গণপরিষদে উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষার প্রস্তাব করা হয় তখন একমাত্র ধীরেন্দ্র নাথ বাবু (কংগ্রেস) ছাড়া কেউ প্রতিবাদ করেনি। ধীরেন বাবু বাংলাকে ৩য় রাষ্ট্রভাষা করার সংশোধনী প্রস্তাব আনলে তা খারিজ করে দেয়া হয়। তিনি বলেন ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভোকেশনে জিন্নাহ র ভাষণ দেয়ার কথা ছিল সে উপলক্ষে তিনি ছাত্র নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন। শেখ মুজিব বলেন আমি সেই বৈঠক বর্জন করেছিলাম। তিনি বলেন পার্টিশনের আগে একমাত্র বাংলায় মুসলিম লীগের শাসন ছিল। কিন্তু ক্যাবিনেট মিশনের সাথে আলোচনায় তিনি কোন বাঙ্গালী নেতা রাখেননি। তিনি কঠোর বাঙালী বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি বলেন ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষে বাংলায় ৩০ লাখ মানুষ মরলেও জিন্নাহ বাংলায় আসেন নি। তিনি পূর্ব বাংলাকে বোম্বে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যাবসায়ীদের বাজার বানাতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন ৪৮ সালের আন্দোলনের পরিনতি ছিল ৫২ এর আন্দোলন। শেখ মুজিব বলেন তিনি তখন জেলে। তিনি বলেন জেলখানা থেকে আমি সিপাইদের মাধ্যমে নির্দেশনা দিতাম। তিনি বলেন আমি ৫০ সালের ডিসেম্বরে জেলে অসুস্থ হয়ে নিরাপত্তা বন্দী হিসেবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। সেখানে তিনি জানুয়ারী মাস পর্যন্ত থাকেন। তিনি বলেন সে সময় নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে আবারো পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা উর্দু হবে বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন সে সময় পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে তিনি ছাত্রনেতাদের সাথে সেখানে কয়েকদফা বৈঠক করেন। আইবি অফিসাররাই ছাত্রনেতাদের বাড়ী থেকে ধরে আনত এবং রাত একটার পর বৈঠক চলত। বৈঠক কোন কোন সময়ে কেবিনের পিছনের বাথরুমেও হত। নেতাদের সকল দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার পর তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারী থেকে অনশন করবেন বলে জানান। নেতারা তাকে জানিয়েছিলেন আন্দোলন শুরু হবে ২১ ফেব্রুয়ারী থেকে। আন্দোলনের খবর হাসপাতাল থেকে ফাস হয়ে গেলে শেখ মুজিবকে জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তিনি বলেন জেলে তখন ন্যাপের মহিউদ্দিন ছিল শেখ মুজিবের অনুরোধে সেও অনশনে যোগ দেয়। সরকার পরিস্থিতি আচ করে শেখ মুজিবকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করে। যথারিতি ২১ ফেব্রুয়ারী আন্দোলন শুরু হয়। তিনি বলেন ৪৮ সালে কেউ মারা যায়নি বলে ৪৮ সালের বিষয়ে তেমন আগ্রহ নেই কিন্তু সে সময় প্রচুর আহত হয়েছিল কোন হাসপাতালে জায়গা হচ্ছিল না। শুধু ঢাকায় নয় ৪৮ সালে যশোর চট্টগ্রাম রাজশাহী ফরিদপুরেও জনতা রক্ত দিয়েছিল।