২০ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ঃ রামগতি ও ভোলায় শেখ মুজিব
শেখ মুজিবুর রহমান সকালে তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে নোয়াখালীর রামগতি সফর শুরু করেছেন। সেখান থেকে তিনি ভোলা যাবেন। তিনি রামগতিতে কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন। তিনি সেখানে জনগনের স্বেচ্ছাশ্রমে একটি উপকূলীয় বাধ নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এ বাধ নির্মাণে কয়েক হাজার সেচ্ছাসেবী কাজ করছে। পানি সম্পদ মন্ত্রী খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ও রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ এ সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলেন।
রামগতির মেঘনার চরে এক জনসভায় তিনি বলেন বাংলাদেশে ১ ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না। তিনি বলেন এ সরকার জনগনের সরকার, সাধারন মানুষের সরকার। তিনি বলেন আমাদের এমন একটি সমাজ গড়ে তূলতে হবে যে সমাজে এ কৃষকরা এ শ্রমিকরা এ ক্ষুধার্ত জনগন আবার হাসতে পারবে। তিনি বলেন জনগনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে ব্যার্থ হলে দেশের স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়বে। কাজেই স্বাধীনতা সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি মুলত সংগ্রাম কেবল শুরু হয়েছে। তিনি বলেন এবারের সংগ্রাম সোনারবাংলা গড়ে তোলার সংগ্রাম। তিনি বলেন আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন কারো কাছে আলাদিনের চেরাগ নেই। রাতারাতি এসব সমস্যা সমাধান কারো পক্ষে সম্ভব নয়। নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম করে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি জনগনের কাছে জানতে চান রাস্তা বাধ সেতু নির্মাণে তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিতে রাজী কিনা জনতা হা সূচক জবাব দেয়। তিনি বলেন দুষ্কৃতিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তিনি বলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা সকলেই আমার কাছে অস্র সমর্পণ করেছে কিন্তু কিছু দুষ্কৃতিকারী এবং পাকিস্তানী দালালরা তাদের কাছে এখনো অস্র রেখে দিয়েছে। এসকল দালালদের কাছ থেকে অস্র ছিনিয়ে নিয়ে তা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করার জন্য তিনি জনগনের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন আমি আঠারো থেকে বিশ ঘণ্টা কাজ করি। তিনি সকলকে আরও পরিশ্রম করার আহবান জানান। তিনি বলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভূট্টো বাঙ্গালীদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করেছেন তাই তিনি সেখানকার বাঙ্গালীদের নিয়ে খুব উৎকণ্ঠিত।
মুজিবুর রহমান ভোলার শান্তির হাটে এক জনসমাবেশে বলেছেন পরিবার প্রতি কারো একশত বিঘার বেশী জমি থাকবে না প্রয়োজনে এ সিলিং আরও কমানো হতে পারে। ফলে বাড়তি যে জমি পাওয়া যাবে তা সরকারের খাস খতিয়ানে এনে ভূমিহীন গরীবদের বন্দোবস্ত দেয়া হবে।
বিকেলে তিনি ভোলার দৌলত খানে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন।
উভয় সফরে তিনি প্রকাশ করে এদেশে কারো একশ বিঘার বেশী জমি রাখতে দেয়া হবে না।