হুমায়ন কবীর
হুমায়ূন কবীরের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২২ জানুয়ারি, শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরভাগা বকাউলকান্দি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নূরুল হক সরকার, মায়ের নাম বিলকিস বেগম। তিন ভাই ও চার বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার পারিবারিক নাম ছিল আবু বিজরিস মােহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, ডাকনাম বুলু। হুমায়ূন কবীর চাঁদপুরের মতলব হাই স্কুল থেকে ১৯৬২ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ১৯৬৪ সালে তিনি নটরডেম কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই. এসসি, পাস করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম. বি. বি, এস. পাস করেন। হুমায়ূন কবীর মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। | হুমায়ূন কবীর স্কুলজীবনে একজন ভালাে স্কাউট ছিলেন। তিনি ১৯৬০ সালে। পাকিস্তানের জাতীয় স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নিতে লাহাের গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি তবলা ও গিটার বাজাতেন, নাটকে অভিনয় করতেন। হুমায়ূন কবীর ভালাে ক্রিকেট খেলতেন। তিনি ক্রিকেট খেলার জন্যেও একবার পাকিস্তান সফর করেছিলেন। ছাত্রজীবনে হুমায়ূন বামপন্থি চিন্তাধারার সাথে যুক্ত হন। মওলানা ভাসানী ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ। ভাসানী ন্যাপের ছাত্রসংগঠন ‘বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি ওই সংগঠনের ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। মেডিকেলের ছাত্র অবস্থাতেই হুমায়ূন গ্রামের গরিব মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া ওষুধ নিয়ে গ্রামে বিনামূল্যে বিতরণ করতেন।
২৫ মার্চের কালরাতে হুমায়ুন কবীর মেডিকেল কলেজের হােস্টেলে ছিলেন। পরদিন বিকালে সেখান থেকে বহু কষ্টে তিনি পালিয়ে ছােট বােন শেলীর হাতিরপুলের বাসায় চলে যান। পরে তিনি চলে যান গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে আহত লােকজনের চিকিৎসার ব্যাপারে উদ্যোগ নেন। তিনি মাঝে মাঝে ঢাকায় আসতেন ওষুধ নিতে। হুমায়ূন কবীর নভেম্বর মাসে ঢাকা আসেন। সে সময় তিনি তার বােন শেলী আকবরকে বলেছিলে, “আর মনে হয়। ঢাকায় আসা যাবে না। মনে হচ্ছে, কেউ আমার ওপর নজর রাখছে।” হানাদার বাহিনী আর তার দোসরদের নজর এড়াতে হুমায়ূন কবীর গোঁফ রেখে অন্যভাবে চুল আঁচড়ে কিছুটা ছদ্মবেশও নিয়েছিলেন।
১৫ নভেম্বর ভাের থেকে হাতিরপুল এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। রাস্তায় রাস্তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এদেশীয় দোসর আলবদর, আলশামসরা অবস্থান নিয়েছিল। সেদিন সকালে হুমায়ূন কবীরের বােনের প্রতিবেশী ডা. আজহারুল হককে নেওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স আসার কথা ছিল। এটা জেনে ওই অ্যাম্বুলেন্সে চলে যাওয়া নিরাপদ ভেবে তিনি ডা. আজহারের সাথে বেরিয়ে পড়েন। তারা বাড়ির সামনে অ্যাম্বুলেন্সের অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় আলবদররা ডা. আজহারুল হক ও ডা. হুমায়ূন কবীরকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন ১৬ নভেম্বর নটরডেম কলেজের কাছে কালভার্টের নিচে ডােবায় তাদের চোখ, হাত ও পা বাধা বিকৃত মরদেহ পাওয়া যায়। আজিমপুর গােরস্তানে ডা. আজহারুল হক ও ডা. হুমায়ূন কবীরকে সমাহিত করা হয়। শহীদ হুমায়ূন কবীর অবিবাহিত ছিলেন।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা