You dont have javascript enabled! Please enable it! হীরেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার - সংগ্রামের নোটবুক
হীরেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার
হীরেন্দ্রচন্দ্র মজুমদারের জন্ম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের খামারগাঁও গ্রামে, ১৯৩৩ সালে। তাঁর বাবার নাম উপেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার। তাঁদের বাড়িটি মজুমদার বাড়ি নামে পরিচিত। তারা ছিলেন তিন ভাই- খগেন্দ্রচন্দ্র, হীরেন্দ্রচন্দ্র ও ভূপেন্দ্রচন্দ্র। হীরেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার ম্যাট্রিক পাস ছিলেন। তিনি স্থানীয় আদর্শ প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ওই অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলা ও লুটতরাজ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে রেখে তিন ভাই বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। ২৬ নভেম্বর একদল রাজাকার-আলবদর তাদের বাড়িতে হানা দেয় এবং তিন ভাইকে ধরে নিয়ে যায়।  পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যমতে, মজুমদার বাড়ির বছরচুক্তি কামলা (কাজের লােক) রব ও তারা মিয়া পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে গােপনে আঁতাত করে তাদের বাড়ি ও সম্পত্তি দখলের চক্রান্ত করে। তারা পাশের এলাকা থেকে আরও কয়েকজন রাজাকার-আলবদর নিয়ে এসে মজুমদার বাড়ি ঘিরে ফেলে। এরপর তিন ভাইকে ধরে পিঠমােড়া করে বেঁধে নিয়ে যায় পাশের বারইগ্রাম মাদ্রাসায় আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে।
সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে। রাজাকার-আলবদরদের পক্ষ থেকে খবর পাঠানাে হয়, মােটা অঙ্কের টাকা পেলে তিন ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরিবারের সদস্যরা ছয় হাজার টাকা জোগাড় করে ক্যাম্পে পাঠালেও রাজাকাররা তিন ভাইকে ফেরত দেয়নি। তাদের আর কোনাে খোঁজও পরিবারের সদস্যরা পায়নি। জানা গেছে, নরসুন্দা নদীর ওপর কালীগঞ্জ রেলসেতুতে নিয়ে তিন ভাইকে হত্যা করা হয় এবং নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয়। মজুমদার পরিবারের বর্তমান প্রধান হিমাংশু মজুমদার একটি সংবাদপত্রকে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর পর দেশের কোনাে রাষ্ট্রপ্রধানই তাঁদের কোনাে খোঁজ নেয়নি। এমনকি স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন দিবসেও পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয় না। এই ক্ষোভ আর কষ্ট নিয়েই ২০১৫ সালের ২৫ জুলাই মারা গেছেন শহীদ হীরেন্দ্রচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী জয়ন্তী মজুমদার। (কালের কণ্ঠ, ১০ মার্চ ২০১৬) শহীদ হীরেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার চার ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা ছিলেন।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা