হিতেন্দ্রনাথ চন্দ
১৯৩৬ সালের ১৪ জুলাই সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার পুঠিয়ার বিখ্যাত চন্দ পরিবারে হিতেন্দ্রনাথ চন্দের জন্ম। তার বাবা নরেন্দ্রনাথ চন্দ ছিলেন যশােরের কালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। হিতেন্দ্রনাথ শিশুকালেই মাকে হারান। হিতেন্দ্রনাথ ১৯৫২ সালে কালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাস করেন। এ সময় তার বাবা মারা যান। তিনি ভারতের আসামের গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বারপেটা এম. সি. কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে আই, এ. । এবং কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ১৯৫৭ সালে বি. এ. পাস করেন। কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সমস্ত সুযােগ থাকার পরও হিতেন্দ্রনাথ চন্দ মাতৃভূমির টানে চলে আসেন পূর্ববঙ্গে তথা পাকিস্তানে। লােভনীয় চাকরির মােহ ফেলে তিনি দাদা ও বাবার মতাে শিক্ষকতাকেই বেছে নেন। ১৯৫৮ সালে তিনি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে যােগ দেন। পরে পুঠিয়া অঞ্চলের মানুষের অনুরােধে ১৯৬০ সালে তিনি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের ঐতিহ্যবাহী পােরজান মুকুন্দনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যােগ দেন। কিছুদিন পর তিনি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরেও তিনি খেলাধুলা, মুক্ত আলােচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষা সফর ইত্যাদি আয়ােজন করতেন। তিনি ছিলেন শিক্ষক সমিতির সক্রিয় নেতা। ১৯৬৯ সালে এলাকার একটি সাম্প্রদায়িক মহলের চক্রান্ত বুঝতে পেরে তিনি স্কুল থেকে পদত্যাগ করেন। অন্যরা তাকে অনেক অনুরােধ করার পরও তিনি আর ওই স্কুলে যােগ দেননি। এ সময় পাশের খুনকী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা এসে তাকে সেখানে যােগ দেওয়ার অনুরােধ জানান। হিতেন্দ্রনাথ ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে যােগ দেন। ছয় মাসের চেষ্টায় তিনি স্কুলটিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করতে সক্ষম হন।
১৯৬৩ সালে শাহজাদপুর উপজেলা সদরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলে হিতেন্দ্রনাথ আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে সহযােগিতা করেন। তিনি কিছুদিন সেখানে ইংরেজি পড়ানাের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কাজে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বলতেন, “আমার নাম হিতেন, তাই সবার হিত সাধন করে জীবন সার্থক করতে চাই।”
১৯৭১ সালের ১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পাক হানাদারদের সহযােগী রাজাকারআলবদর চক্র তার বাড়িতে হানা দেয়। তারা হিতেন্দ্রনাথের বাড়ি থেকে টাকাপয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, জমির দলিল লুট করে। এরপর তাকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে। শহীদ হিতেন্দ্রনাথ চন্দ বিবাহিত ছিলেন। তার সংসারে দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে ছিল। তার মৃত্যুর আট মাস পর তার ছােট মেয়ের জন্ম হয়।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা