সৈয়দ আবদুল হাই
সৈয়দ আবদুল হাই ১৯১৮ সালের ১ ডিসেম্বর শেরপুর শহরের শহরতলীতে জন্ম নেন। তার বাবার নাম সৈয়দ আফরুজউদ্দিন এবং মায়ের নাম আসিয়া খাতুন। তাদের বাড়িটি ‘মিয়া বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। চার ভাই ও চার বােনের মধ্যে আবদুল হাই ছিলেন সপ্তম। আবদুল হাই শেরপুরের গােবিন্দ কুমার পিস মেমােরিয়াল স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক এবং তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে আই, এসসি, পাস করেন। এরপর তিনি ময়মনসিংহ লিটন স্কুল থেকে ১৯৫৪ সালে এল, এম. এফ. এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে এম. বি. ডিগ্রি পান। ১৯৫০ সালে তিনি পাকিস্তান আর্মি মেডিকেল কোরে যােগ দেন। আবদুল হাই আর্মি মেডিকেল কোরের সদস্য হিসাবে ১৯৬৪ সালে ঘানা যান। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মেডিকেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ের উপর দুই বছর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭০ সালে দেশে ফিরে তিনি যশাের সেনানিবাসে ডেপুটি সার্জন জেনারেল পদে যােগ দেন।
সৈয়দ আবদুল হাই কোনাে বিশেষ দলের রাজনৈতিক মতবাদ পােষণ করতেন। তবে বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক নীতির তিনি ছিলেন বিরােধী। কর্নেল এম. এ. জি. ওসমানীর সাথে তার বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। ওসমানীর চিন্তা-ভাবনা তাঁকে প্রভাবিত করেছিল। ১৯৭১ সালের মার্চে সৈয়দ আবদুল হাই যশাের সেনানিবাসে ছিলেন। পাকিস্তান থেকে অস্ত্র-গােলাবারুদ ঢাকায় আনার বিষয়টি তিনি জানতে পারেন এবং এতে তার মনে সন্দেহ ও সংশয় জাগে। ২৫ মার্চের পর যশাের ব্রিগেড কমান্ডার তাকে কোনাে অবস্থাতেই ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেন। কার্যত তিনি হয়ে পড়েন গৃহবন্দি। ৩০ মার্চ সকাল ৭টায় তাকে টেলিফোন করে অফিসে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি চলে যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের সদস্যদেরসহ অন্য বাঙালি পরিবারগুলােকে দাউদ পাবলিক স্কুলে জড়াে করা হয়। সারা দিন সেখানে আটক রাখার পর বিকালে তাদের ঘরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। এদিন সন্ধ্যায় পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার দুররানির স্ত্রী টেলিফোন করে সৈয়দ আবদুল হাইয়ের স্ত্রী নাসিম হাইকে জানান যে ডা. হাইকে হত্যা করা হয়েছে। এ খবর শুনে নাসিম হাই পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সাথে যােগাযােগ করে তাঁর স্বামীর লাশ ফেরত চান। তাঁর লাগাতার চেষ্টার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সৈয়দ আবদুল হাইয়ের মৃতদেহ ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়।
পরদিন ৩১ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী আবদুল হাইয়ের পরিবারকে কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। একটি কার্গো বিমানে করে আবদুল হাইয়ের লাশের সাথে তার পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। পরদিন মার্শাল ল’ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তার লাশ আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। অন্যদিকে যশাের ক্যান্টনমেন্টে আবদুল হাইয়ের বাসার সমস্ত জিনিসপত্র পাকিস্তানি সেনারা লুট করে। শহীদ ডা, কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাইয়ের স্ত্রীর নাম নাসিম হাই। তাদের সংসারে তিন ছেলে ছিল। যশাের সেনানিবাসের সি. এম. এইচ.-এ খােলা হয়েছে ‘কর্নেল হাই ওয়ার্ড’। ওই সেনানিবাসেই ‘গৌরবাঙ্গন’ নামে কর্নেল হাইয়ের স্মৃতিসমৃদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যশাের শহরে একটি সড়কের নাম কর্নেল সৈয়দ আবদুল হাইয়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা