সুজাউদ্দীন আহমদ
সুজাউদ্দীন আহমদ আনুমানিক ১৯২২ সালে দিনাজপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জগথা গ্রামে জন্ম নেন। তার বাবার নাম মাে. মসিতুল্লাহ সরকার, মায়ের নাম নজিবন নেসা। পাঁচ ভাই ও এক বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তার ডাকনাম সুজা।
সুজাউদ্দীন ১৯৪৫ সালে দিনাজপুর জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ১৯৪৮ সালে তিনি বগুড়ার ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুল থেকে এল, এম, এফ, পাস করেন। ডাক্তারি পাস করে সুজাউদ্দীন প্রথমে নিজ গ্রামের বাড়িতে এবং পরে পীরগঞ্জ চৌরাস্তার মােড়ে (জগথা মৌজায়) জমি কিনে ডিসপেন্সারি স্থাপন করেন এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করেন। কোনাে গরিব মানুষ তার কাছে বিমুখ হতাে না। তাদের কাছ থেকে তিনি কোনাে ভিজিট নিতেন না, সম্ভব হলে বিনামূল্যে ওষুধ দিয়ে দিতেন। তাঁর চিকিৎসার সুনাম দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল।
সুজাউদ্দীন সাহিত্যপ্রেমী ছিলেন। তিনি কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রতিবেদন ইত্যাদি লিখেছেন। তার উৎসাহে ও পৃষ্ঠপােষকতায় পীরগঞ্জে প্রতি বছর নিয়মিতভাবে নাটক ও যাত্রাপালা অভিনীত হতাে। তিনি নিজেও তাতে অভিনয় করতেন। এলাকার খেলাধুলায় তিনি পৃষ্ঠপােষকতা করতেন। পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, পীরগঞ্জ কলেজ, পীরগঞ্জ ডাকঘর, পাবলিক লাইব্রেরি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ডা. সুজাউদ্দীন আহমদ ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাঁর ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তিনি পীরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। শহীদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পীরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পীরগঞ্জে হানা দেয়। পাকবাহিনী ও তাদের দালালরা ডা, সুজাউদ্দীনসহ সাতজনকে ধরে নিয়ে যায়। ১৭ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও জেলার শিবগঞ্জের ভাতারমারীডাঙ্গীতে এই সাতজনকে হত্যা করা হয়। পরদিন পরিবারের সদস্যরা এই খবর জানতে পারেন। তাকে বিরহলীতে পারিবারিক গােরস্তানে কবর দেওয়া হয়। শহীদ ডা. সুজাউদ্দীন আহমদের স্ত্রীর নাম তাহেরা বেগম। তাঁদের সংসারে তিন ছেলে ও চার মেয়ে ছিল। শহীদ সুজাউদ্দীনের নামে পীরগঞ্জ পৌরসভার একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে এবং পীরগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরির সামনে একটি নামফলকে তার নাম লিপিবদ্ধ আছে।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা