You dont have javascript enabled! Please enable it! সিরাজুল হক খান - সংগ্রামের নোটবুক
সিরাজুল হক খান
সিরাজুল হক খান ১৯২৪ সালের ১ জানুয়ারি ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়া গ্রামে জন্ম নেন। তার বাবার নাম। চাদ মিয়া খান, মায়ের নাম ইজ্জাতননেছা। সিরাজুল হক খানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় স্থানীয় সাতচকিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৩৯ সালে তিনি ফুলগাজী  হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ১৯৪১ সালে তিনি ফেনী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই. এ. পাস করেন। সিরাজুল ১৯৪৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিস্টিংশনসহ বি. এ. পাস| করেন। এরপর সরকারের কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ বিভাগে ইন্সপেক্টর হিসাবে। সিরাজুল হক খান কর্মজীবন শুরু করেন। সিরাজুল হক খান ছিলেন আদর্শবাদী মানুষ। ছােটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন একদিন শিক্ষক হবেন, শােষিত-বঞ্চিত জনগােষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলাে বিতরণ করবেন। তাই মাত্র তিন মাসের মাথায় তিনি লােভনীয় সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে ফুলগাজী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যােগ দেন।
পেশাগত ডিগ্রি অর্জনের জন্য তিনি ১৯৪৮ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৪৯ সালে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান নিয়ে বি. টি, (ব্যাচেলর অব টিচিং) ডিগ্রি পান। একই বছর তিনি ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যােগ দেন। পরে তিনি ঢাকার মতিঝিল সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সিরাজুল হক খান ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এম. এড. ডিগ্রি পান। এখানেও তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান পেয়েছিলেন।  ১৯৬৫ সালে তিনি শিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৃত্তি পান এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলােরাডাে স্টেট কলেজে ডক্টর অব এডুকেশন প্রােগ্রামে যােগ দেন। ১৯৬৭ সালে “ডক্টর অব এডুকেশন ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে এসে ১৯৬৮ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা প্রশাসন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যােগ দেন। সিরাজুল হক খান ছিলেন রাজনীতি সচেতন এবং বামপন্থি রাজনীতির সমর্থক। বাম রাজনীতির সমর্থক এই শিক্ষাবিদ বৈষম্যহীন একটি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তােলায় ছিলেন সদা সচেষ্ট। তাইতাে দেখা যায়, পাকিস্তানি নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯৫১ সালে তিনি পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। তিনি সবসময় চাইতেন, দেশে একটি সেকুলার ও বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তিত হােক। মুক্তমনের অধিকারী সিরাজুল হক গণবিরােধী শরীফ খান শিক্ষা কমিশনকে মেনে নিতে পারেননি।
তিনি ছিলেন একজন নামকরা পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা। তিনি স্কুল টেক্সট বুক বাের্ডের বাংলা, ইংরেজি ও ইতিহাস বিষয়ে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। শিক্ষা প্রশাসন বিষয়ে তিনি বেশ কিছু গবেষণা করেছেন। তাঁর অনেক নিবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়। সিরাজুল হক খান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন। তিনি স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন প্রচারণায় অংশ নেন এবং শিক্ষকদের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। ১৪ ডিসেম্বর সকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযােগী আলবদর বাহিনী অধ্যাপক ড. সিরাজুল হক খানকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বাসা ১৬ নং বিল্ডিং থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। তিনি আর ফিরে আসেননি। পরে মিরপুরের বধ্যভূমিতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। স্বাধীনতার পর অন্যান্য শহীদ বুদ্ধিজীবীর সাথে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। ১৯৭২ সালে অধ্যাপক ড. সিরাজুল হক খানকে জাতীয় পর্যায়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘােষণা করা হয়। শহীদ সিরাজুল হক খানের স্ত্রীর নাম সুরাইয়া খানম। তাদের সংসারে পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা