You dont have javascript enabled! Please enable it! সিরাজ উদ্দিন আহমেদ - সংগ্রামের নোটবুক
সিরাজ উদ্দিন আহমেদ
সিরাজ উদ্দিন আহমেদের জন্ম মানিকগঞ্জ শহরের গঙ্গাধরপট্টি এলাকায়। মানিকগঞ্জ শহরেই তার বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষাদীক্ষা।  লােভনীয় সরকারি চাকরিকে উপেক্ষা করে সিরাজ উদ্দিন বেছে নিয়েছিলেন। শিক্ষকতা। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন যশােরের মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক। ঊনসত্তরের উত্তাল দিনগুলােতে সিরাজ স্বাধীনতার চেতনা ছড়িয়ে দিয়েছেন ছাত্র-জনতার মাঝে। একাত্তরের উত্তাল মার্চে তার ভূমিকা ক্ষুব্ধ করেছিল পাকহানাদার আর তাদের দোসরদের।  ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতে যশাের শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় পাক হানাদার বাহিনী। মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠে তাদের এ দেশীয় দোসররা। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল, ঘাতক পাকবাহিনী এবং তাদের দোসররা ঘিরে ফেলে অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিনের যশাের শহরের বাসা। বাড়ির আঙিনাতেই গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। বাড়ির গােপন জায়গায় লুকিয়ে থেকে গুলির শব্দ শুনেছিলেন তার স্ত্রী আর একমাত্র শিশু সন্তান।
১৯৭২ সালের জুলাই মাসে মানিকগঞ্জের মহকুমা প্রশাসকের কাছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের দফতর থেকে একটি চিঠি আসে। শহীদ সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রীর উদ্দেশে সেই চিঠিতে লেখা হয়েছিল : “প্রিয় বােন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার সুযােগ্য স্বামী আত্মােৎসর্গ করেছেন। আপনাকে আমি গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আপনার শােক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও রইল আমার প্রাণঢালা সহানুভূতি। এমন নিঃস্বার্থ মহান দেশপ্রেমিকের স্ত্রী হওয়ার গৌরব লাভ করে সত্যিই আপনি ধন্য হয়েছেন।”
শহীদ অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিনের পরিবারের কাছে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বলতে যা বােঝায়, তা ওই একটি চিঠির মাঝেই গত ৪৬ বছর আটকে আছে। এরপর আর কোনাে সরকার বা অন্য কেউ শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিনের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দেয়নি। তার নিজ জেলা মানিকগঞ্জেও আজ পর্যন্ত তাকে স্মরণ করার কোনাে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শহীদ সিরাজ উদ্দিনের মেজ ভাইয়ের ছেলে মানিকগঞ্জের আইনজীবী আসাদুজ্জামান আসাদ দৈনিক ইত্তেফাকের সাংবাদিককে বলেন, “আমার চাচার এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সামান্যতম কোনাে আর্থিক, বৈষয়িক সুবিধা রাষ্ট্র কিংবা সরকারের কাছে চাই না, আমাদের পরিবারের তার প্রয়ােজনও নেই। আমরা শুধু শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে আমাদের চাচার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিটা চাই।” শহীদ সিরাজ উদ্দিনের একমাত্র সন্তান সাইদ হােসেন অভিমানে এ বিষয়ে সাংবাদিকের সাথে কোনাে কথা বলতেই রাজি হননি। (ইত্তেফাক, ০৩ জানুয়ারি ২০১৭)

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা