You dont have javascript enabled! Please enable it! সালেহ উদ্দিন আহমদ - সংগ্রামের নোটবুক
সালেহ উদ্দিন আহমদ
সালেহ উদ্দিন আহমদ জন্মেছিলেন ১৯৪১ সালে হবিগঞ্জ শহরে। তার বাবার নাম মাওলানা রফিক উদ্দিন আহমদ এবং মায়ের নাম আশরাফুন্নেছা খাতুন। চার ভাই ও চার বােনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার ডাকনাম সালেহ। সালেহ উদ্দিন ১৯৫৬ সালে হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে তিনি প্রথম বিভাগে আই. এসসি. পাস করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এম. বি. বি. এস. পাস করেন। ‘আহমদ ক্লিনিক নামের একটি ডিসপেন্সারিতে তিনি চিকিৎসা সেবা দিতেন।  ডা. সালেহ উদ্দিন ছিলেন হবিগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আওয়ামী লীগ নেতা মােস্তফা আলীর শায়েস্তাগঞ্জ রােডের বাসায় একটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণ বেড়ে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায় সবাই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নেন। এপ্রিল মাস থেকে কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব সালেহ উদ্দিনের ওপর পড়ে।
১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগ কর্মী  হীরেন্দ্র কুমার রায়কে নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। তাঁকে জানানাে হয়েছিল, শায়েস্তাগঞ্জে ভারতীয় সেনারা অবস্থান করছে। অথচ ইতােমধ্যে শায়েস্তাগঞ্জ শহর পাকিস্তানি সেনারা দখল করে নিয়েছে। হবিগঞ্জ থেকে শায়েস্তাগঞ্জে পৌছেই সালেহ উদ্দিন ও হীরেন্দ্র কুমার পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন। ডা. সালেহ উদ্দিন পাকিস্তানি সেনাদের কাছে নিজেকে একজন ডাক্তার হিসাবে পরিচয় দিয়ে বলেন যে তিনি রােগী দেখতে যাচ্ছেন। তার সাথের ব্যক্তি তার সহকারী। কিন্তু পাকিস্তানি সেনারা তাদের সাথের ব্যাগ তল্লাশি চালিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য সংগৃহীত নগদ টাকার সন্ধান পেয়ে যায়। টাকার পরিমাণ দেখে পাকিস্তানি সেনাদের সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে তাদের মুখের ভেতর বন্দুকের নল ঢুকিয়ে গুলি করে ডা. সালেহ উদ্দিন আহমদ এবং হীরেন্দ্র কুমার রায়কে হত্যা করা হয়। তাদের লাশ পাশের একটি বাঁশঝাড়ের নিচে পুঁতে রাখা হয়। স্বাধীনতার পর আত্মীয়-স্বজনরা তাদের লাশ তুলে নিয়ে সকার করে। শহীদ ডা, সালেহ উদ্দিন আহমদের লাশ তার নিজ গ্রাম নিজামপুরের পরিবারিক গােরস্তানে সমাহিত করা হয়। তিনি অবিবাহিত ছিলেন।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা