সামসুল করিম খান
ডাক্তার বাবার কর্মস্থল বার্মাতে জন্ম নেন সার্জেন্ট সামসুল করিম খান। তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে তাদের পুরাে পরিবার। গ্রামে ফিরে আসেন। ১৯৪৮ সালে স্থানীয় কালিগঞ্জ হাই স্কুল থেকে সামসুল করিম ম্যাট্রিক পাস করেন। তিনি উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু পারিবারিক টানাপােড়েনের কারণে পড়াশােনা চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৯৪৯ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। সামসুল করিম খান। অত্যন্ত জেদি এবং একরােখা প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। দেশের বিরুদ্ধে কেউ কোনাে কিছু বললে তিনি সামনাসামনি সেটার প্রতিবাদ করতেন। যার কারণে দিনের পর দিন তার পদোন্নতি আটকে থাকত। তার কর্মস্থল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের মারিপুরের সারগােদায়।
সেখানে বাঙালি ছিল হাতে গােনা। ফলে সেখানে একজোট হওয়ার কোনাে উপায় ছিল। তাই তিনি দেশে ফেরার সুযােগ খুঁজছিলেন। এ সময় তার কাছে পরবর্তী বদলির প্রস্তাব আসে- ঢাকা অথবা কুয়েত। তিনি ঢাকাকে বেছে নেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্য অনেক অফিসারসহ সামসুল করিম খানকে পাবনার ঈশ্বরদীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মূলত ঢাকা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই তাদের ঈশ্বরদী পাঠানাে হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সামসুল আশেপাশের গ্রামবাসীকে অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। সে সময় তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঢাকার কুর্মিটোলায় অবস্থান করছিলেন। এপ্রিলের শুরুর দিকে সামসুল নিজের পরিবারের সাথে দেখা করতে এসে দেখেন। ঘরে তালা ঝুলছে। উপরের তলার মানুষদের কাছে খোঁজ নিতে গিয়ে জানলেন, তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদেই ঢাকা ছেড়েছেন। ফিরে চলে আসার সময় উপরের। তলার বাসিন্দার অনুরােধে খেতে বসেছিলেন। এমন সময় সেখানে পাকবাহিনীর সদস্যরা হানা দেয় এবং তাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ১৯ এপ্রিল রাতে সার্জেন্ট সামসুল করিম খানসহ আরও ৬ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা