সাদত আলী
সাদত আলী ১৯৪২ সালের ২৮ জানুয়ারি নরসিংদী জেলার সদর থানার রসুলপুর গ্রামে জন্ম নেন। তাঁর পারিবারিক নাম মােহাম্মদ সাদত আলী। তাঁর বাবার নাম মােহাম্মদ হযরত আলী, মায়ের নাম মমতাজের নেসা। সাদত আলীর শিক্ষাজীবন শুরু রসুলপুর জুনিয়র স্কুলে। ১৯৫৬ সালে তিনি গাজীপুর জেলার গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই ১৯৫৮ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। ছাত্র হিসাবে অসম্ভব মেধাবী ছিলেন সাদত। জানা যায়, দশম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে তিনি বাংলা-ইংরেজি অভিধান মুখস্থ করে ফেলেছিলেন। রসুলপুর জুনিয়র স্কুলে এক শিক্ষক তাকে এ. টি. দেবের অভিধান থেকে এক বসায় দুই হাজার শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। সব শব্দের সঠিক উত্তর দিয়েছিলেন সাদত। তিনি ১৯৬০ সালে নরসিংদী কলেজ থেকে আই. কম. পাস করেন। তিনি অন্যের বাড়িতে লজিং থেকে পড়াশােনা করেছেন। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. কম, (সম্মান) এবং ১৯৬৪ সালে এম. কম, ডিগ্রি লাভ করেন। সাদত আলী কর্মজীবনের শুরুতে কিছুদিন নরসিংদী কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রভাষক হিসাবে যােগ দেন।
উচ্চতর গবেষণার জন্য সরকারি বৃত্তি নিয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন কলােরাডাে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে ১৯৬৯ সালে তিনি ডক্টরেট অব এডুকেশন (এড. ডি.) ডিগ্রি পান। দেশে ফিরে তিনি পুনরায় অধ্যাপনায় যােগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সাদত আলী শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন্নাহ হলের (বর্তমান ‘মাস্টারটা সূর্যসেন হল) আবাসিক শিক্ষকের দায়িত্ব লাভ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৭১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে এম. এ. পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সাদত আলীর নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে বেশি কিছু জানতে পারা যায়নি। জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সাদত তার গ্রামের বাড়ি চলে যান। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে তিনি ঢাকায় আসেন। ২৬ এপ্রিল তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টার্স থেকে বেরিয়ে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে অবস্থিত ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। সেদিন কার্জন হল এলাকায় তার আত্মীয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে সাদতের দেখা হয়। আমিনুল ইসলাম টাকা তুলে সাদতকে তার বাসায় যেতে বলেছিলেন। কিন্তু সাদত আর আসেননি। এরপর আমিনুল ইসলাম কোথাও তার খোঁজ পাননি। ধারণা করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে টহলরত পাকিস্তানি সেনারা তাকে গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। শহীদ সাদত আলীর স্ত্রীর নাম আজিজুন নাহার। তাদের সংসারে তিন মেয়েমাহমুদা, ফাহমিদা ও শাহিদা। বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ ১৯৯৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মােহাম্মদ সাদত আলীর নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা