সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য
সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য জন্মেছিলেন ১৯১৫ সালের ৩ আগস্ট ফরিদপুরে। যদিও তার পৈতৃক নিবাস ঢাকা জেলার নওয়াবগঞ্জ উপজেলার যন্ত্রাইল গ্রামে। সন্তোষচন্দ্রের দাদা তারিণীচরণ শিরােমনি এ// মহামহােপাধ্যায়কে ‘দ্বিতীয় রঘুনন্দন’ নামে ডাকা হতাে এবং পুরাণ, ন্যায় ও স্মৃতিশাস্ত্রে সুপণ্ডিত হওয়ায় তিনি মায়ারাম বিদ্যাসাগর’ হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন। সন্তোষচন্দ্রের বাবা ক্ষিতিশচন্দ্র ভট্টাচার্য ছিলেন ঢাকার একজন আইনজীবী, আর তার মায়ের নাম সরযুবালা দেবী। তার দুই কাকা সচ্চদানন্দ ভট্টাচার্য ও সুকুমার ভট্টাচার্য ইতিহাসের অধ্যাপক ছিলেন। সচ্চদানন্দ ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। আর সুকুমার ভট্টাচার্য সারাজীবন শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেছেন। ১৯৩২ সালে সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য পােগােজ স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এই পরীক্ষায় তিনি অবিভক্ত বাংলায় ১৪তম স্থান অধিকার করেছিলেন। ১৯৩৪ সালে তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই. এ. পাস করেন। এই পরীক্ষায় তিনি অবিভক্ত বাংলায় দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এরপর তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে।
১৯৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বি, এ. ডিগ্রি পান। এজন্য তিনি ‘স্যার যদুনাথ সরকার বৃত্তি পান। উল্লেখ্য, ওই বছর সম্মান পরীক্ষায় কোনাে ছাত্রই প্রথম শ্রেণি পায়নি। ১৯৩৮ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সন্তোষচন্দ্র প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এই কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসাবে তখনকার নিয়মানুসারে বিভাগীয় সুপারিশক্রমে তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ছােটবেলা থেকেই শিক্ষকতা ও গবেষণামূলক কাজের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল সন্তোষচন্দ্রের। তাই শিক্ষাজীবনের পাট চুকিয়ে ১৯৩৮ সালে তিনি ইতিহাস। বিভাগে গবেষণার কাজ শুরু করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল মৌর্য শাসন পদ্ধতি। নব-আবিষ্কৃত শিলালিপি, সমকালীন রচনা ও বিদেশি পর্যটকদের বিবরণী পর্যালােচনার মাধ্যমে তিনি উদ্যোগী হয়েছিলেন মৌর্য শাসন পদ্ধতি সম্পর্কে নতুনভাবে আলােকপাত করার জন্য। কিন্তু ১৯৩৯ সালে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে ইতিহাসের প্রভাষক হিসাবে যােগ দেওয়ায় এই গবেষণা কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজের ইতিহাস। বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর প্রথম যৌবনের উদ্যম ও উৎসাহ তিনি জগন্নাথ কলেজের ছাত্রদের জন্য ব্যয় করেছিলেন।
১৯৪৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অস্থায়ী প্রভাষক হিসাবে যােগ দেন। ১৯৫০ সালে তিনি প্রভাষক হিসাবে স্থায়ী হন। ষাটের দশকে তিনি সহকারী অধ্যাপকের পদ লাভ করেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ওই পদেই ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সন্তোষচন্দ্র জড়িত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে। তিনি খুবই ধীসম্পন্ন পণ্ডিত অধ্যাপক ছিলেন, কিন্তু আত্মভােলা ছিলেন না কখনও। ঘণ্টা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাসে ঢােকা, নিয়মিত টিউটোরিয়াল ক্লাস নেওয়াই শুধু নয়, মন্তব্যসহ খাতা ফেরত দেওয়া ছিল তার নৈমিত্তিক ব্যাপার। এ কারণে তার শিক্ষার্থীরা তাকে খুব সমীহ করত, শ্রদ্ধাও করত।
সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে গভীরভাবে ভালােবাসতেন। তাই ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় তার পরিবারের অনেকে ভারতে চলে গেলেও তিনি ঢাকা ছেড়ে যাননি। তিনি বলতেন, “জন্মভূমি আর মা দুটোই নিজ আত্মার সমতুল্য। যে জন্মভূমিকে ভালােবাসে না, সে তার মাকেও ভালােবাসতে পারে না।” ভাষা নিয়ে পাকিস্তানি শাসকদের বিভিন্ন চক্রান্তের বিরুদ্ধে ছিলেন বলে পাকিস্তান গােয়েন্দা বিভাগের খাতায় তার নাম লাল তালিকায় লেখা ছিল এবং তিনি পুলিশের নজরে ছিলেন। ইতিহাসের অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও সংস্কৃত এবং বিশেষত ইংরেজি সাহিত্যে তার বিশেষ দক্ষতা ছিল। কিন্তু বাংলা ভাষার প্রতি সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্যের ভালােবাসা ছিল আরও গভীর। একটি ঘটনায় তিনি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিমকে বলেছিলেন, “আপনার মেয়ের মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবােধ থাকবে না, স্বভাষা চর্চা করবে না, এ আপনি সমর্থন করেন কী করে!” এ ঘটনায় নীলিমা ইব্রাহিম লজ্জিত হয়েছিলেন।
সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সরকার মনােনীত সদস্য হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে অধ্যাপক গােবিন্দচন্দ্র দেব ছুটিতে গেলে ১৯৬৬ সালের ১ জুলাই থেকে ১৯৬৭ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি জগন্নাথ হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৩ সালে ড. আহমেদ হাসান দানীর অনুপস্থিতিতে সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ঢাকা জাদুঘরের কিউরেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান এশিয়াটিক সােসাইটি প্রতিষ্ঠা হলে তিনি ১৯৫২ সালেই এর সদস্য হন এবং বেশ কয়েকবার এশিয়াটিক সােসাইটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসাবে কাজ করেন। ১৯৬৭-‘৬৮ সালে গঠিত ইতিহাস পরিষদ ও ‘East Pakistan History Association’-এর সাথে তিনি জড়িত হন। তিনি ইতিহাস পরিষদের কোষাধ্যক্ষ, যুগ্ম সম্পাদক এবং কমিটির সদস্য ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এসব গবেষণা সংগঠনগুলাের। প্রকাশনার ক্ষেত্রে তাঁর অতুলনীয় অবদান রয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষায় গবেষণা পত্রিকা ‘Dacca University Studies’-এ কাজ করেছেন দক্ষতার সাথে। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ইতিহাস কমিটির সদস্য ও প্রধান পরীক্ষক ছিলেন।
কট্টর ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নিলেও তিনি ছিলেন সংস্কারমুক্ত, আধুনিক চেতনাসম্পন্ন একজন মানুষ। সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্যের চরিত্রে সমন্বয় ঘটেছিল সনাতন ও আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্যের। ফলে তিনি হয়ে ওঠেন ব্যক্তিজীবনে সাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জীবনে আধুনিক। পড়া এবং পড়ানাে- এই দুই নেশায় তিনি ছিলেন বিভাের। সামনের কাতারের রাজনৈতিক জীবন চর্চায় সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য কখনও না এলেও তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন। সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব বা ছাত্রদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি আলাপ-আলােচনা করতেন, বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর বিশ্লেষণী মত দিতেন, কিন্তু কখনও উচ্চকণ্ঠ বা উত্তেজনা প্রকাশ করতেন না। তিনি ছাত্রদের অনুরােধ করতেন যাতে তারা পড়াশােনা ঠিক রেখে আন্দোলন-সংগ্রাম করে। সমকালীন ইতিহাস গবেষকদের তুলনায় তাঁর প্রকাশনা ছিল খুবই কম। মেধাবী ছাত্র হিসাবে ভালাে ফল পেলেও বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ততটা চেষ্টা তিনি। করেননি। অন্যদিকে তিনি ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে রচনার সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে মান। বৃদ্ধির উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন কম, কিন্তু যেটুকু লিখেছেন সেখানে বিষয়ের উপর তার দক্ষতা, তথ্য উপস্থাপনের কৌশল এবং বিশ্লেষণের গভীরতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ইতিহাসকে তিনি সহজ বিষয়ে পরিণত করেছিলেন।
সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্যের ইংরেজিতে লিখিত প্রবন্ধগুলাে হলাে : ‘The Original Home of the Guptas’ (১৯৬২), ‘The Buddha in the Puranas’ (১৯৬৬), “Emperor Asoka : A Re-Study’ ($90), “The Ramgupta Problem in the Light of the Recently Discovered Inscriptions’ (১৯৭২)। বাংলায় রচিত প্রবন্ধগুলাে হলাে : ‘অশােকের ধর্ম’ (১৯৬৯), ‘ব্যাড়ী ভক্তি তরঙ্গিণী’ (১৯৬৮) ‘কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র’ (১৯৭২)। এছাড়া তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ ও প্রবন্ধ নিয়ে সমালােচনা লিখেছেন। তার একটি মাত্র অনুবাদ গল্প প্রকাশিত হয়েছিল জগন্নাথ হলের বার্ষিকীতে- ‘শুধু শুধু ভালবাসা’ (১৩৯৬)। একাত্তর সালের যুদ্ধ-কবলিত দিনগুলােতে ঢাকা শহর ছেড়ে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দূর-দূরান্তে গ্রামে-গঞ্জে চলে যায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই ভারতে চলে যায়। সন্তোষচন্দ্রকেও অনেকেই অনুরােধ করেন ভারতে চলে যেতে। কিন্তু তিনি বিভিন্ন কথা বলে প্রস্তাবের কথা ঘুরিয়ে নিতেন। বলতেন, “আমি আমার মাতৃভূমি ছেড়ে কোথাও যাব না। কেন যাব? আমি তাে কোনাে অন্যায় করিনি।” তার প্রিয় ছাত্র ও ইতিহাসের অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন তাকে এদেশের সীমানার বাইরে রেখে আসতে চেয়েছিলেন। সন্তোষচন্দ্র বলেছিলেন, ঢাকা ছেড়ে কোথায় যাবেন? ছেড়ে যদি যেতেই হয়, তাহলে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় ভারতে যেতে পারতেন। দেশ না ছাড়ার সংকল্প থেকে তাকে কেউ টলাতে পারেনি। অবশ্য কিছুদিনের জন্য তিনি পরিবার-পরিজনসহ ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাইলে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরই ফিরে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিজের ঘরে, অর্থাৎ ৩১ নম্বর ঈশা খাঁ রােডের বাসায়।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। সকাল ৯টা কি সাড়ে ৯টা বাজে। ঈশা খাঁ রােডের বাসায় মাত্র পূজা শেষ করে নাস্তা খেতে বসবেন সন্তোষচন্দ্র। এমন সময় হঠাৎ ক্রিং ক্রিং শব্দে সদর দরজার বেল সজোরে বেজে উঠে। বেল বাজছে অবিরাম, পর পর গেটের দরজায় কড়া বুটের আঘাত পড়ছে। উপরের তলার দরজায়ও এমনি আঘাতের শব্দ শােনা যায়। ঘরের সবাই শঙ্কিত হয়ে উঠলেন। সন্তোষচন্দ্রের স্ত্রী বীণাপাণি চক্রবর্তী ভয়ে ভয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ান। বুটের আঘাতে ততক্ষণে উপরের তলার দরজাটা ভেঙে পড়ার শব্দ শােনা গেল। বীণাপানি এতে আরও ভয় পেয়ে যান। দরজা না খুলে তিনি গিয়ে ডেকে আনেন সন্তোষচন্দ্রকে। স্ত্রীর কথায় জামা বদলে এলেন সন্তোষচন্দ্র। বীণাপানি গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। কয়েকজন রইল দরজার বাইরে। ঘরে ঢুকেই ওরা অধ্যাপক সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্যের খােজ করে। সন্তোষচন্দ্র এগিয়ে যেতেই ওরা বলল, “স্যার, আমাদের সঙ্গে একটু যেতে হবে।” পরিস্থিতি অনুমান করতে পারলেও ‘স্যার’ সম্বােধনে খানিকটা নিশ্চয়তা পেলেন সন্তোষচন্দ্র। বললেন, “টেবিলে খাবার দিয়েছে, খেয়ে আসি। তােমরা একটু বসাে।” ওদের পক্ষ থেকে ত্বরিৎ উত্তর এল, “না, স্যার, বসতে পারব। আপনাদের জন্য ভালাে নাশতার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এক্ষুনি চলুন।”
অবশেষে ঘর থেকে বের হলেন সরল নির্ভীক জ্ঞানতাপস অধ্যাপক সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য। কিন্তু ঘরের দরজা পেরােতেই দেখলেন দুদিক থেকে কয়েকজন উদ্যত রাইফেল উচিয়ে তাকে ঘিরে ফেলেছে। এবার আর কিছু বুঝতে বাকি থাকল না তার। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “কিন্তু আমার অপরাধ কী, বলেন আপনারা?” এ প্রশ্নের কোনাে উত্তর তিনি পাননি সেদিন। বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পর ওরা শুধু বলল, “বেশি কথা বলবেন না। চুপ করে থাকেন। আমরা যখন যাকে খুশি নিয়ে যেতে পারি।” নিচে অপেক্ষমাণ গাড়িতে উঠানাের আগেই কালাে কাপড়ে তার চোখ বেঁধে ফেলা হয়। জানা যায়, মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের কাছে নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় ২০-২১ দিন তার কোনাে খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি তার গলিত মরদেহের খোঁজ পাওয়া গেল রায়পুরার ঝিলে। সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্যকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় তার পরনের কাপড়, ধূসর চুল ও দাত দেখে। এরপর তার গলিত দেহাবশেষ পােস্তগােলা শ্মশানে নিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। ১৯৭২ সালে সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্যকে জাতীয় পর্যায়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য বিয়ে করেছিলেন রেলওয়ে কর্মচারী ভূপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মেয়ে বীণাপাণি চক্রবর্তীকে। তাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে জন্ম নেয়। ছেলে প্রদীপ ভট্টাচার্য ও মেয়ে স্বপ্না ভট্টাচার্য (গঙ্গোপাধ্যায়)। বীণাপাণি চক্রবর্তী ছােটবেলা থেকেই ভালাে গান গাইতেন। ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাসে তিনি মারা যান।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা