সতীশচন্দ্র সরকার
সতীশচন্দ্র সরকারের জন্ম দিনাজপুরে। দিনাজপুরের মহারাজা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি কলকাতা যান। কিন্তু গানের নেশায় তাঁর আর পড়াশােনা করা হয়নি। গান শেখার জন্য তিনি একসময় বেনারস যান। পরে দিনাজপুরে ফিরে এসে তিনি গান আর নাটক নিয়ে মেতে ওঠেন। সতীশচন্দ্র উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে দক্ষ ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশাত্মবােধক ও গণসঙ্গীত গাইতেই পছন্দ করতেন। তিনি রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও বামপন্থি রাজনীতির প্রতি তাঁর সহানুভূতি ছিল।
আর এ কারণে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাকে গান গাইতে হতাে, অন্যদের গান শেখানাের দায়িত্বও পালন করতে হতাে। সতীশচন্দ্র চাকরি করতেন দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে, অফিস সহকারী হিসাবে। গান শিখিয়েও অর্থ উপার্জন করেছেন। যদিও আক্ষেপ করে বলতেন যে পয়সার বিনিময়ে গান শেখানাে উচিত নয়। দিনাজপুরের মানুষের কাছে তিনি “মনুদা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা দিনাজপুর শহরে হানা দিলে সতীশচন্দ্র নিজের ছেলেমেয়েদের সবাইকে প্রথমে গ্রামে, পরে ভারতে পাঠিয়ে দেন। নিজেও ভারতে চলে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু তার আগেই ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল পাকবাহিনীর দোসর রাজাকাররা তাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর স্ত্রী সুলেখা কাকুতি মিনতি করেও তাকে রক্ষা করতে পারেননি। এরপর থেকে সতীশচন্দ্রের আর কোনাে খােজ পাওয়া যায়নি। শহীদ সতীশচন্দ্র সরকারের স্ত্রীর নাম সুলেখা রাণী সরকার। তাদের সংসারে ছয় ছেলেমেয়ে ছিল।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা