You dont have javascript enabled! Please enable it!
শেখ মুহম্মদ রুস্তম আলী
শেখ মুহম্মদ রুস্তম আলীর জন্ম ১৯২৩ সালে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভবানীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মাে. ওমর আলী। দেশভাগের পর তাদের পরিবার তকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জে চলে আসে। লেখাপড়া শেষ করে রুস্তম আলী ঝিনাইদহের শৈলকূপায় থানা কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে চাকরিতে যােগ দেন। ব্যক্তি হিসাবে রুস্তম আলী ছিলেন উদার ও বন্ধুবৎসল। মানুষকে খাওয়াতে, বিলাতে ভালােবাসতেন। আত্মীয়-বন্ধু সবার প্রতিই তিনি ছিলেন কর্তব্যপরায়ণ। রুস্তম আলী ছিলেন শৈলকূপা থানার কৃষি কর্মকর্তা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তাকে সাবডিভিশনাল কর্মকর্তা হিসাবে ঝিনাইদহে বদলি করা হয়। এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তিনি সপরিবারে কালীগঞ্জ শহরে বাস করতেন। তাই তিনি কাজে যােগ না দিয়ে পরিবারের সদস্যদের কালীগঞ্জের অদূরে গান্না গ্রামে পাঠিয়ে দেন। পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে ৮ এপ্রিল তিনিও গান্না গ্রামে চলে আসেন। গান্নায় পাকবাহিনী হামলা চালালে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কয়েকদিন পালিয়ে বেড়ান।
১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল রুস্তম আলী কালীগঞ্জ গিয়েছিলেন নিজেদের বাড়িঘরের অবস্থা দেখার জন্য। সাথে ছিল তার ছােট ভাই শেখ মাে. শামসুজ্জোহা, তাঁর সম্বন্ধী মাে. নূর ইসলাম এবং তার চৌদ্দ বছর বয়সী ছেলে আমীরল। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে তারা নিজেদের বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেদিন কালীগঞ্জে হানা দিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। আরও অনেকের সাথে রুস্তম আলী, তাঁর ছােট ভাই ও সম্বন্ধীকে কালীগঞ্জ নলডাঙ্গা ভূষণ হাই স্কুল (বর্তমান নাম ‘সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়’) মাঠে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। রুস্তম আলীর ছেলে আমীরুল্ল সারাদিন সারারাত ঘরে খিল এঁটে বসে ছিল। তার বাবা-চাচা কেউ না আসায় পরদিন ভােরে সে ঘর থেকে বেরিয়ে বাবা-চাচাকে খুঁজতে থাকে। সারাদিন খুঁজেও সে কারও সন্ধান না পেয়ে রাতে গান্না গ্রামে ফিরে যায়। রুস্তম আলীর এক বন্ধু রুস্তম আলী, তার ভাই শামসুজ্জোহা ও সম্বন্ধী নূর। ইসলামের লাশ হাই স্কুল মাঠে পড়ে থাকতে দেখে তাদের পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়। কিন্তু কালীগঞ্জ শহরে পাকবাহিনী ঘাঁটি গেড়ে থাকায় কেউ সেখানে যেতে পারেনি। পাঁচদিন পর ২৪ এপ্রিল পাকবাহিনী কালীগঞ্জ ছেড়ে চলে গেলে রুস্তম আলীর পরিবারের সদস্যরা কালীগঞ্জ গিয়ে তাদের লাশ শনাক্ত করেন। ইতােমধ্যে তাদের লাশ কুকুর-শিয়ালে খেয়ে ফেলেছে, পচে-গলে গেছে। বিকৃত ছিন্নভিন্ন লাশগুলাে বস্তায় ভরে গরুর গাড়িতে করে গান্না গ্রামে নেওয়া হয় এবং সেখানেই সমাহিত করা হয়।  শহীদ শেখ মুহম্মদ রুস্তম আলী ছয় ছেলেমেয়ের বাবা ছিলেন। তার মেয়ে ফাতিমা বসুনিয়ার লেখা থেকে জানা যায়, রুস্তম আলী, তাঁর ভাই এবং তাঁর সম্বন্ধীর পরিবার শহীদ পরিবার হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!