শেখ আবদুস সালাম
শেখ আবদুস সালাম ১৯৪০ সালের ১২ জুলাই বর্তমান নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিলবাওচ গ্রামে জন্ম নেন। তার বাবার নাম শেখ আবদুল গফুর এবং মায়ের নাম ফুলজান নেছা। শেখ আবদুস সালাম ১৯৫৬ সালে কালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ১৯৬০ সালে খুলনা ব্রজলাল কলেজ থেকে বি. এ. পাস করেন। ১৯৬০ সালে বি. এ. পাস করার পর তাঁকে কিছুদিন পড়াশােনা স্থগিত রাখতে হয়। সালাম ১৯৬০ সালে নওয়াগ্রাম ইউনাইটেড একাডেমির প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি বেন্দা ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন এবং বড়দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি কালিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হন। সুদক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে তিনি স্কুলগুলােকে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন। শেখ আবদুস সালাম খুলনা আইন কলেজ থেকে বি. এল. এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বি, এড. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এম. এ. ক্লাসে ভর্তি হন। সালাম ১৯৭০ সালে এম. এ. প্রথম পর্ব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান পান। ১৯৭১ সালে শেষ পর্বের পরীক্ষা চলাকালে অসহযােগ আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায় । শেখ আবদুস সালাম স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ছিলেন অসাধারণ বক্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরােধী গণআন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে ১৯৭০ সালে সামরিক সরকার তাঁকে কারারুদ্ধ করে।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযােগ আন্দোলনে আবদুস সালাম সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এ সময় তিনি ছিলেন কালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ কালিয়ায় পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকা পােড়ানাের অনুষ্ঠানে তিনি বক্তৃতা করে এলাকার মানুষদের মুক্তিযুদ্ধে শামিল হওয়ার ডাক দেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আবদুস সালাম সক্রিয়ভাবে তাতে অংশ নেন। তার নেতৃত্বে কালিয়ায় গড়ে ওঠে মুক্তিবাহিনী সংগ্রাম পরিষদ’ । তিনি ছিলেন এ পরিষদের আহ্বায়ক। ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথমদিকে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শেখ আবদুস সালামকে গ্রেফতার করে। যশাের ক্যান্টনমেন্টে কয়েকদিন নির্যাতনের পর ১৩ মে তাঁকে হত্যা করা হয়। জানা যায়, তাকে দিয়েই তার নিজের কবর খোড়ানাে হয়েছিল। স্বাধীনতার পরে কালিয়া কলেজের নামকরণ হয় কালিয়া শহীদ আবদুস সালাম ডিগ্রি কলেজ। বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ ১৯৯৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শেখ আবদুস সালামের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। শহীদ শেখ আবদুস সালামের স্ত্রীর নাম মনােয়ারা সালাম। তাদের সংসারে চার। ছেলেমেয়ে ছিল।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা