শিবসাধন চক্রবর্তী
শিবসাধন চক্রবর্তী ১৯৪৬ সালের ২৫ মার্চ নােয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ থানার বিরাহীমপুর গ্রামে জন্ম নেন। তার মায়ের নাম সুনীতিপ্রভা চক্রবর্তী, বাবার নাম হরেন্দ্র কুমার চক্রবর্তী। শিবসাধনের ডাকনাম ছিল শিবু’। খুব ভালাে ছাত্র ছিলেন শিবসাধন চক্রবর্তী- ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি নােয়াখালী জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও তিনি প্রথম বিভাগে পাস করেন। শিবসাধন ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে ভর্তি হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি শিক্ষকতা পেশায় যােগ দেন। তিনি কিছুদিন কুমিল্লার বাঞ্ছারামপুর নওয়াব সিরাজুল ইসলাম কলেজে শিক্ষকতা করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ করে ১৯৬৯ সালে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন, সহ-সম্পাদক হিসাবে যােগ দেন পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায়। শিবসাধন চক্রবর্তী ছিলেন নিভৃতচারী, স্বল্পভাষী। অফিসে-ব্যক্তিজীবনে ছিলেন চুপচাপ, কর্মঠ একজন মানুষ। ছাত্রজীবন শেষে শিবসাধন কিছুদিন ঢাকার গােপীবাগে থাকতেন। অবজারভারে যােগ দেওয়ার পর ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে গােপীবাগের বাসা ছেড়ে তিনি রমনা কালীমন্দির এলাকার একটি মেসে উঠেন। শিবসাধন সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর সহকর্মী সাংবাদিক মাশুক উল হক বলেন : ২৬ মার্চ শিবসাধন চক্রবর্তী অফিসে এসেছিলেন। তাঁকে দেখে অবাক হই। তাকে নিরাপদে কোথাও চলে যেতে অনুরােধ করি। তিনি বলেছিলেন যে তাঁর কাছে। টাকা নেই, তাই অ্যাকাউন্টসে খোজ নিতে এসেছেন। রমনা কালীমন্দির এলাকায়। তাঁকে থাকতে বারণ করি, কিন্তু ওখানেই তিনি ফিরে গিয়েছিলেন, হয়তাে তাঁর যাওয়ার জায়গা ছিল না।
২৭ মার্চ, ১৯৭১। সারা শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। হঠাৎ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হানা দেয় রমনা কালী মন্দির ও শ্ৰী শ্ৰী মা আনন্দময়ী আশ্রমে। পাকিস্তানি সেনারা মন্দির আর আশ্রমে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের ধরে এনে বাইরে লাইন করে দাঁড় করায়। পাকিস্তানিরা জোর করে সবাইকে কলেমা পড়ায়। তারপর পুরুষদের ব্রাশফায়ার করে, মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য বেয়নেট চার্জ করে। পরে লাশগুলাে স্থূপ করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। শিশুদের আছড়ে, বেয়নেট চার্জ করে, আগুনে ফেলে দিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানিরা। বয়স্ক নারীদের রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করে, বেয়নেট চার্জ করে। আর অপেক্ষাকৃত কম বয়স্কা নারীদের ধরে নিয়ে যায়। রমনা কালী মন্দির এলাকায় পাকিস্তানিদের গণহত্যার শিকার হয়ে শহীদ হন সাংবাদিক শিবসাধন চক্রবর্তী। এ সময় তার বয়স ছিল ২৫ বছর দুই দিন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবা হরেন্দ্র কুমার চক্রবর্তীও ১৯৭১ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিরাহীমপুরে নিজের বাড়িতে রাজাকার বাহিনীর হাতে নিহত হন।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা