You dont have javascript enabled! Please enable it!
শাখাওয়াৎ হােসেন
শাখাওয়াৎ হােসেনের জন্ম ১৯১৮ সালে, যশাের জেলার সদর উপজেলার বানিয়ালি গ্রামে। তার বাবার নাম মাে. ইউসুফ আলী, মায়ের নাম বিনােদা বিবি। তিনি ছিলেন পরিবারের বড় । সন্তান, তার পরে দুই বােন জন্মায়। তিনি ‘ছকা ভাই’ নামে। সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। শাখাওয়াৎ হােসেনের শিক্ষাজীবন কেটেছে কলকাতায়। সেখানকার নীলরতন মেডিকেল কলেজ থেকে তিনি এল, এম. এফ, পাস করেন। তিনি প্রথম জীবনে নীলরতন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করেন। পরে নড়াইল, মাগুরা ও যশাের সদর হাসপাতালে চাকরি করেছেন। ১৯৭১ সালে তিনি যশাের সদর হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন, থাকতেন যশাের শহরে। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ তাকে ভীষণ উদ্দীপ্ত করে। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেছিলেন, “আমার আশা আর করাে। , আমার আশা ছেড়ে দাও। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। আমার যা কিছু। আছে আমি সব দিয়ে এ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ব।”  ২৯ মার্চ যশাের ক্যান্টনমেন্টের মেজর হাফিজ তার সেনাদের নিয়ে বিদ্রোহ। ঘােষণা করেন। এপ্রিলের শুরুতে পাক সেনাবাহিনী শক্তি বৃদ্ধি করে যশাের আক্রমণ। করে। পাকবাহিনী যশােরে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। হাসপাতাল রােগীতে ভরে ওঠে। হাসপাতালের অনেক ডাক্তার, নার্স পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় ডা. শাখাওয়াৎ হােসেন প্রচণ্ড পরিশ্রম করে আহতদের চিকিৎসা করেছেন।
পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি বানিয়ালিতে পাঠিয়ে দেন। এ সময় তার ছেলেমেয়েরা তাকে জড়িয়ে ধরে তাদের সাথে যেতে বলে। সে সময় ছেলেমেয়েদের তিনি বলেছিলেন, “তােমার বাপকে শুধু। বাঁচাবে, অন্যদের বাপকে বাঁচাতে দেবে না!” তিনি থেকে গেলেন হাসপাতালের আহত রােগীদের জন্য। ডা. শাখাওয়াতের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁর মেয়ে লালফিতা দিয়ে রেডক্রসের চিহ্ন বানিয়ে তাঁর শার্টে লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই শার্ট পরেই তিনি হাসপাতালে যেতেন। ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হানা দেয় যশাের সদর হাসপাতালে। তাদের কাছে খবর গেছে যে এই হাসপাতালে আহত মুক্তিযােদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডা. শাখাওয়াৎ হােসেন চিকিৎসক হিসাবে হিপােক্রেতিসের। শপথ, জেনেভা কনভেনশন ইত্যাদি কথা পাকসেনাদের সামনে তুলে ধরলেন, মানবিক আবেদন জানালেন। কিন্তু এসব আবেদন ঘাতকদের পাষাণ হৃদয়ে জায়গা।
পায়নি, বরং তাদের ক্ষিপ্ত করে তােলে। পাকসেনারা ডা. শাখাওয়াৎসহ আরও চারপাঁচজনকে হাসপাতালের ভেতরেই সারি করে দাঁড় করায়, তারপর ব্রাশফায়ার করে সবাইকে হত্যা করে। হাসপাতালের ভেতরই তাদের মাটিচাপা দেওয়া হয়।  শহীদ ডা. শাখাওয়াৎ হােসেনের স্ত্রীর নাম তাহেরা খাতুন। স্বামীর মৃত্যুর খবর। শুনে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। অসুস্থ অবস্থায় ১৯৭৪ সালে তার মৃত্যু হয়। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ে ছিল। শহীদ ডা. শাখাওয়াৎ হােসেনের স্মরণে তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের জমিতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলেন। বর্তমানে এর নাম ‘শহীদ শাখাওয়াৎ হােসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!