শরাফত আলী
শরাফত আলী ১৯৪৩ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা জেলার সদর থানার দক্ষিণ রামপুর গ্রামে জন্ম নেন। তার বাবার নাম আলী আজম এবং মায়ের নাম রজ্জবেন্নেছা। শরাফত আলী ১৯৬০ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৯৬২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই. এসসি পাস করেন। তিনি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে বি, এসসি. ডিগ্রি লাভ করেন। শরাফত আলী ১৯৬৪-‘৬৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে এম, এসসি, ক্লাসে ভর্তি হন এবং ১৯৬৫ সালে প্রথম পর্ব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৬ সালে এম. এসসি. শেষবর্ষ পরীক্ষায় তিনি উপস্থিত হননি। ক্লাসের সকলে তার কাছে জানতে চায় যে কেন সে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু শরাফত আলী এতই লাজুক প্রকৃতির ছিলেন যে তিনি কারও প্রশ্নের জবাব দিতে পারতেন। তিনি প্রয়ােজন ছাড়া তেমন একটা কথাও বলতেন না। কিন্তু তাঁর অমায়িক আচরণের জন্য সবাই তাকে পছন্দ করত। পরে জানা যায় যে সে সময় তার বাবার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সে পরীক্ষা দিতে পারেনি। পরের বছর ১৯৬৭ সালে শেষবর্ষ এম, এসসি. পরীক্ষায় গণিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে শরাফত আলী সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক পান।
১৯৬৭ সালেই শরাফত আলী গণিত বিভাগের প্রভাষক হিসাবে নিয়ােগ পান। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা হলের (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল) সহকারী আবাসিক শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পান এবং তিনি সংশ্লিষ্ট হলে তার জন্য নির্ধারিত আবাসে চলে আসেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি শরাফত আলী দেশের গণআন্দোলনের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। তিনি শিক্ষক মহলের সংগ্রাম পরিষদে সমর্থন দেন এবং পাকিস্তানবিরােধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদারদের আক্রমণে শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক এলাকায় শরাফত আলী শহীদ হন। ১৯৭২ সালে শরাফত আলীকে জাতীয় পর্যায়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে ঘােষণা করা হয়।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা