You dont have javascript enabled! Please enable it!
ললিত কুমার বল
ললিত কুমার বল ১৮৯৪ সালে পিরােজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামে জন্ম নেন। তার বাবার নাম ভারতচন্দ্র বল। ললিত কুমার ১৯১৬ সালে ম্যাট্রিক, ১৯১৮ সালে আই. এ. এবং ১৯২০ সালে। বি. এ. পাস করেন। এরপর কিছুদিন তিনি কুড়িয়ানা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি তিনি আইন পড়তে থাকেন। ললিত কুমার বল ১৯২৩ সালে। আইনে স্নাতক পাস করেন। এরপর ১৯২৫ সালে তিনি পিরােজপুর বারে যােগ দেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩০ সালে ললিত কুমার বল বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত একটানা বঙ্গীয় আইন পরিষদ নির্বাচনে কাউখালী-পিরােজপুর সংরক্ষিত আসন থেকে এম, এল, এ. ছিলেন। তঙ্কালীন ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘রায় সাহেব’ উপাধি দিয়েছিল। তিনি পিরােজপুরে ‘অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেছেন। | ১৯৩৬ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে যান। পরে ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে আবার নির্বাচিত হন। পাকিস্তান হওয়ার পর তিনি পাকিস্তান সংসদীয় দলের প্রতিনিধি হিসাবে জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং পশ্চিমের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জোয়ারের মুখে তিনি চিত্তরঞ্জন সুতারের কাছে হেরে যান।। | ১৯৫৪ সালের পর থেকে ললিত কুমার বলের রাজনৈতিক মতাদর্শে পরিবর্তন আসতে থাকে। তখন থেকে তার মাঝে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে এবং ১৯৬২ সালের কেন্দ্রীয় নির্বাচনে পিরােজপুর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অংশ নিলেও এ চিন্তাধারার কারণে তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশ নেননি। এটাই ছিল তাঁর রাজনৈতিক জীবনে প্রথম কোনাে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। সে নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনােনীত প্রার্থীকে সমর্থন করেন।
১৯৭১ সালের ১৭ মে মঠবাড়িয়ায় পাক সেনাবাহিনী হানা দেয়। ললিত কুমার বল পালিয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী গ্রামে তার ভায়রা ভাই শ্রীকান্ত হাওলাদারের বাড়ি চলে যান। সেখান থেকে মঠবাড়িয়ার তৎকালীন সি, আই. জালাল উদ্দিন ও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জব্বার ইঞ্জিনিয়ার, এস্কান্দারসহ রাজাকাররা ললিত কুমার বলকে ধরে এনে পাকসেনাদের কাছে তুলে দেয়। তাকে নিয়ে আসা হয় কে, এম, লতিফ ইনস্টিটিউশন ছাত্রাবাসের পাকসেনাদের ক্যাম্পে। সেখানে তাঁকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  এরপর ৭ জুন পাকসেনারা তাকে পিরােজপুরের মঠবাড়িয়ায় রাস্তার উপর। জনসমক্ষে গুলি করে হত্যা করে। তার বিরুদ্ধে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযােদ্ধাদের সমর্থন এবং মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযােগ আনা হয়। তাঁর সাথে হত্যা করা হয় তকালীন মঠবাড়িয়ার সি. ও. (ডেভ.) মাখম লাল দাস ও স্থানীয় কালু পাগলকে। ( ৭ জুন সকাল আনুমানিক ১১টায় দড়ি দিয়ে পিঠমােড়া করে হাত বেঁধে ললিত কুমার বল ও সি. ও, মাখম লাল দাসকে টি, অ্যান্ড, টি অফিসের সামনের সড়কে নিয়ে আসে পাকসেনারা। রাস্তার পাশে ডােবার ধারে তাদের দুজনকে দাড় করানাে হয়। এমন সময় কালু পাগল নামের একজন সেখানে আসলে রাজাকাররা তাকেও বেঁধে এনে ওই দুজনের সাথে দাঁড় করায়। পাকসেনারা তিনজনকে একসঙ্গে গুলি করে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় রাস্তার পাশের ডােবায়। ললিত কুমার বলের আত্মীয়-স্বজনরা তার লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। ললিত কুমার বল দুই বার বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী সরােজিনী বড়ালের কোনাে সন্তান ছিল না। দ্বিতীয় স্ত্রী বিন্দুবাসিনীর ঘরে দুই মেয়ে জন্মায়।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!