রেবতী কান্ত সান্যাল
রেবতী কান্ত সান্যাল ১৮৯৯ সালে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বিশিয়া গ্রামে। জন্ম নেন। তার বাবার নাম রমণী কান্ত সান্যাল এবং মায়ের নাম শরৎসুন্দরী দেবী। রমণী কান্ত একজন জমিদার ছিলেন। রেবতী ছিলেন সংসারের একমাত্র ছেলে। তার আরও দুই বােন ছিল। রেবতী কান্তের ডাকনাম ছিল গেদু সান্যাল। রেবতী কান্ত ১৯১৫ সালে খাজুরা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ১৯১৭ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আই. এসসি. এবং ১৯২০ সালে দ্বিতীয় বিভাগে বি. এসসি. পাস করেন তিনি। রেবতী কান্ত ১৯২৫ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এম. বি. পাস করেন। এরপর কিছুদিন তিনি ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের বালুঘাট হাসপাতালে সহকারী সার্জন হিসাবে কাজ করেন। রেবতী কান্ত সান্যাল ছাত্রজীবন থেকে ভারতীয় কংগ্রেসের সাথে যুক্ত ছিলেন। (১৯২২-১৯৪৭) এবং স্বদেশী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিনি বহুবার কারাবরণ করেছেন। স্বদেশী আন্দোলনে অংশ নেওয়া, চিকিৎসা পেশা এবং সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজের জন্য তিনি সবার শ্রদ্ধেয় ছিলেন।
পাশাপাশি তিনি স্কাউটেরও সদস্য ছিলেন। রেবতী কান্ত সান্যাল থাকতেন নাটোর শহরের লালবাজারের নিজস্ব বাসভবনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে শহরের অনেক বাঙালি, বিশেষত হিন্দুরা ভারতে চলে যায়। কিন্তু রেবতী যাননি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, চিকিৎসককে কেউ মারবে না। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল স্থানীয় রাজাকার নাসিরউদ্দিন চেয়ারম্যান এবং মুসলিম লীগ নেতা কাচু মুক্তার রেবতী কান্তের বাড়িতে এসে তাকে আশ্বস্ত করে যে তার কোনাে ক্ষতি হবে না। কিন্তু বিকাল ৪টার দিকে নাসির চেয়ারম্যান ও কাচু মুক্তার আরও দুজন অবাঙালিকে সাথে নিয়ে রেবতী কান্তের বাড়িতে হানা দেয়। তারা দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢােকে। রাজাকার দল রেবতী কান্তকে দেখেই গুলি চালায়। গুলি লাগে তার। ডান হাতে। রাজাকার বাহিনী তখন বাড়ির সিন্দুকে রাখা স্বর্ণমুদ্রা ও ১৪ হাজার পােস্টাল ইনস্যুরেন্স লুট করে।
সিন্দুক লুট করে বের হওয়ার পথে রাজাকারদের সাথে থাকা অবাঙালিদের একজন রেবতী কান্তের দিকে তিনটি গুলি ছােড়ে। গুলি প্রথমে লাগে রেবতীর পেটে, তারপর বুকে, তারপর চোখের খুব কাছে কপালে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। রেবতী কান্তকে বাঁচাতে এসে তার বাড়ির কাজের লােক ‘পদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। রেবতী কান্ত সান্যালের স্ত্রীর নাম অন্নপূর্ণা দেবী। ১৯২৮ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের সংসারে এক ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মতে, তাঁর। ছেলেমেয়ে সবাই মারা গেছে। আরও জানা গেছে, এই পরিবারটি শহীদ পরিবার হিসাবে কোনাে রাষ্ট্রীয় সহযােগিতা পায়নি। শহীদ ডা. রেবতী কান্ত সান্যালের দূর সম্পর্কের নাতি ডা. লক্ষীকান্ত সান্যালের লেখা থেকে জানা গেছে, রেবতী কান্তের লালবাজারের বাড়িটি বেদখল হয়ে গেছে। বাড়ির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা