You dont have javascript enabled! Please enable it! রেজাউন নবী - সংগ্রামের নোটবুক
রেজাউন নবী
রেজাউন নবী ১৯৪২ সালে নাটোর চকবৈদ্যনাথ মহল্লার সম্ভ্রান্ত খন্দকার পরিবারে জন্ম নেন। তাঁর পারিবারিক নাম খন্দকার রেজাউন নবী’ । তিনি ‘রবি’ নামেই সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। তার বাবার নাম মােহাম্মদ নাসিরউদ্দিন। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর রেজাউন নবী নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজে স্নাতক (পাস) কোর্সে ভর্তি হন। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল চোখে পড়ার মতাে। ১৯৬৩-‘৬৪ শিক্ষাবর্ষে কলেজে প্রথম ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজের ছাত্র সংসদের প্রথম সহ-সভাপতি (ভি. পি.) নির্বাচিত হন রেজাউন নবী। ১৯৬৪ সালে তিনি স্নাতক পাস করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে রেজাউন নবী ১৯৬৭ সালে নিজেদের জমিতে ‘বনবেলঘরিয়া জুনিয়র হাই স্কুল নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এই বিদ্যালয়ের তিনি ছিলেন অবৈতনিক ও প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তিনি এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। নাটোরের অসহযােগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে রেজাউন নবী সরাসরি জড়িত ছিলেন। তিনি নিজেও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। এ কারণেই এলাকার পাকিস্তানপন্থি ও অবাঙালিরা তার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিল। একাত্তরের ১৫ মে কয়েকজন অবাঙালি এবং পাকসেনা তাঁদের বাড়িতে হানা দেয়। তারা রেজাউন নবীকে ধরে একটি জিপে করে তুলে নিয়ে যায় নাটোর ফুল বাগানে। 
নাটোর ছিল পাক হানাদারদের ২ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার। এখান থেকেই দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যুদ্ধ পরিচালনা করত পাকবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে নাটোরে বড় ধরনের কোনাে লড়াই না হলেও একাধিক স্থানে গণহত্যা চালানাে হয়েছে। আর নাটোর ফুল বাগান ছিল পাকসেনাদের বন্দিশালা ও টর্চার ক্যাম্প। রেজাউন নবীকে উদ্ধার করার জন্য তাঁর মা এবং বড় ভাই সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরাও কেউ আর ফিরে আসেননি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এলাকাবাসী শহীদ রেজাউন নবীর স্মরণে ‘বনবেলঘরিয়া জুনিয়র হাই স্কুলের নাম পাল্টে রাখে ‘বনবেলঘরিয়া শহীদ রেজাউন নবী উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতি বছর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৫ মে দিনটিকে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করে থাকে।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ –  আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা