রিয়াছত আলী
তােমরা দেখ আইয়ারে- লণ্ঠন জ্বালাইয়া লীগের ভব যায়রে’- ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের সময় যুক্তফ্রন্টের পক্ষে গাওয়া হতাে এই গানটি। গানটি সে সময় জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এমনকি নির্বাচনের পরও বহু দিন বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে লােকমুখে গানটি শোনা যেত। এই গানের রচয়িতা ছিলেন শহীদ রিয়াছত আলী। রিয়াছত আলী ১৯৩২ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের ছাতকের দোলারবাজার ইউনিয়নের মইনপুর গ্রামে জন্ম নেন। ১৯৫২ সালে তিনি এইডেড হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর তিনি মুরারি চাঁদ কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সে সময় তিনি শিক্ষাজীবন চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৯৫৬ সালে তিনি এইডেড হাই স্কুলে। শিক্ষক হিসাবে যােগ দেন। রিয়াছত আলী প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ১৯৬১ সালে আই. এ, এবং ১৯৬৪ সালে বি. এ. পাস করেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এড. করেন। এইডেড হাই স্কুল ছিল সিলেট জেলার সবচেয়ে বড় বিদ্যালয়। এইডেড স্কুলের অনেক শিক্ষকের মাঝে পােশাকে, চলনে-বলনে, শিক্ষাদানে আর ছাত্রদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে ব্যতিক্রম ছিলেন রিয়াছত আলী।
তিনি স্কুলের ডিবেটিং সােসাইটিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতেন। রিয়াছত আলী ‘কাব্যবিনােদ’ ও ‘কাব্যরত্ন’ উপাধি পেয়েছিলেন। হযরত শাহজালালের জীবন নিয়ে লেখা ‘শ্রীহট্ট জ্যোতি তাঁর লেখা বইগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের সময় ‘লীগশাহীর আমলনামা’ নামে তার একটি গানের বই ছাপা হয় এবং তার লিখিত গানগুলাে তখন সিলেটসহ সারাদেশে নির্বাচনী সভাগুলােতে গাওয়া হতাে। গানে গানে শিক্ষকদের করুণ জীবন তুলে ধরে ‘পাঠশালার মাষ্টার বা দুর্গতের গান’ নামে আরেকটি বই তিনি লিখেছিলেন। তিনি আরও কিছু ধর্মীয় পুস্তিকা লিখেছিলেন। রিয়াছত আলী ১৯৭১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একদল আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। শােনা যায়, রিয়াছত আলীকে যারা খুন করেছিল, তারা ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিয়েছিল। ১৯৭০ সালে একজন হিন্দু নারীকে ভালােবেসে বিয়ে করেছিলেন রিয়াছত আলী। তাঁর মৃত্যুর প্রায় সাড়ে চার মাস পর তার ছেলে কামালের জন্ম হয় । দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবীর পরিবার হিসেবে তাঁর স্ত্রী দুই হাজার টাকা অনুদান পেয়েছিলেন।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা