রামকৃষ্ণ অধিকারী
রামকৃষ্ণ অধিকারী বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার সিংহেরকাঠি গ্রামে জন্ম নেন। জন্মের মাত্র নয় মাসের মাথায় রামকৃষ্ণের বাবা মারা যান। তাঁরা ছিলেন দুই ভাই। তাদের নিজেদের কোনাে জমি ছিল না। রামকৃষ্ণের বড় ভাই অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করে সংসার চালাতেন। বড় ভাইয়ের আন্তরিক ইচ্ছা। থাকার কারণেই প্রচণ্ড অভাবের মধ্যেও রামকৃষ্ণ লেখাপড়া করতে পেরেছিলেন। রামকৃষ্ণ বাবুগঞ্জ হাই স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে ম্যাট্রিক এবং ব্রজমােহন কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে আই. এ. পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায়। ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এম. এ. পাস করেন। ১৯৭১ সালে তিনি কারমাইকেল। কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। পাকসেনারা ৩০ এপ্রিল রাতে তাকে কলেজ হােস্টেল। থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। রাজনীতির সাথে যুক্ত না থাকলেও রামকৃষ্ণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে ভােলার কাজ করেন। তার এ তৎপরতা স্বাধীনতাবিরােধী রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নজরে পড়ে যায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ও মুক্তিযােদ্ধাদের সংগঠিত করতে রংপুর কারমাইকেল কলেজের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক কালাচাদ রায়ের বাসায় একটি বৈঠক বসে।
আগে থেকেই এদের উপর নজরদারি করছিল ইসলামী ছাত্র সংঘের (বর্তমান ইসলামী ছাত্র শিবির) রংপুর শাখার সভাপতি এ. টি. এম. আজহারুল ইসলাম। আজহারুলের কাছ থেকে বৈঠকের খবর পেয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাত ৯টার দিকে অধ্যাপক কালাচাদ রায়ের বাসা ঘিরে। ফেলে। বুটের লাথিতে দরজা খুলে ভেতরে ঢােকে পাকবাহিনী। টেনে-হিচড়ে বের করে আনা হয় অধ্যাপক কালাচাদ রায়, তার স্ত্রী মঞ্জু রানি রায়কে। রামকৃষ্ণ অধিকারীসহ কলেজের আরও কয়েকজন অধ্যাপককে পাকবাহিনী আটক করে। এরপর বন্দুক দিয়ে মারতে মারতে তাদের আর্মি ট্রাকে তােলা হয়। আড়াল থেকে ঘটনাটি দেখতে পান ওই বাসার কেয়ারটেকার, যিনি পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জানা গেছে, রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের দমদমা ব্রিজের নিচে গুলি করে তাদের সবাইকে হত্যা করে পাকবাহিনী। শহীদ রামকৃষ্ণ অধিকারী অবিবাহিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর তার বড় ভাইয়ের পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। সর্বশেষ তথ্যমতে, এখনও শহীদ গেজেটে নাম ওঠেনি রামকৃষ্ণ অধিকারীর। কারমাইকেল কলেজ প্রশাসনের অবহেলার কারণে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪১ বছর পর কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মিত হয়।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা