রফিক আহমেদ
রফিক আহমেদের জন্ম ১৯১৮ সালের মার্চে, ফেনীর সদর উপজেলার উত্তর চাড়ীপুর মােক্তার বাড়িতে। তার বাবার নাম মাে. সিরাজউদ্দিন, মায়ের নাম আছিয়া খাতুন। পাঁচ ভাই ও তিন বােনের মধ্যে রফিক ছিলেন দ্বিতীয়। রফিক আহমেদ ফেনী পাইলট হাই স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক এবং ফেনী কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে আই. এসসি. পাস করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এল, এম, এফ, পাস করেন। ডা. রফিক আহমেদ মেডিকেল অফিসার হিসাবে ফেনী, নােয়াখালী, রামগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, ফুলছড়ীঘাট, ভরতখালী, লালমনিরহাট, বােনারপাড়া প্রভৃতি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসাবে চট্টগ্রাম, প্রত্নগর, সৈয়দপুর ও পাকশী রেলওয়ে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ কোনাে রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত না হলেও ডা. রফিক আহমেদ চাইতেন বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা হােক। ১৯৭১ সালে ডা. রফিক পাকশী রেলওয়ে হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ২৫ মার্চের পর সেখানকার প্রায় সমস্ত বাঙালি কর্মকর্তা, ডাক্তার পাকশী ছেড়ে চলে যান। ডা. রফিক প্রায় একাই হাসপাতালের রােগীদের সামলেছেন। সে সময় তার স্ত্রী ও সাত ছেলেমেয়ে ছিল কুমিল্লায় । পাকশীতে ডা, রফিক ও তাঁর চার ছেলে অবস্থান করছিলেন।
পাকশীর বাঙালি ও অবাঙালি রাজাকার বাহিনী সেখানকার বাঙালিদের ওপর হামলা-নির্যাতন চালাতে থাকে। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকবাহিনী অবাঙালিদের সহযােগিতায় ডা. রফিক আহমেদ এবং তার তিন ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করে। এদিন রেলওয়ে হাসপাতালের হেড ক্লার্ককেও হত্যা করা হয়। ডা. রফিকের এক ছেলে ও বাসার কাজের ছেলেটি লুকিয়ে থাকায় সেদিন বেঁচে যায়। ডা. রফিক আহমেদের বাসার সামনেই তাদের কবর দেওয়া হয়। এই স্থানটি পাঁচ শহীদের মােড় নামে পরিচিত। শহীদ ডা. রফিক আহমেদের স্ত্রীর নাম ফাতেমা আহমেদ। তাঁদের সংসারে আট ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল। ছেলে জিয়াউদ্দিন, রইস উদ্দিন ও ছাইফুদ্দিন বাবার সাথেই শহীদ হন।
সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ – আলী মাে. আবু নাঈম, ফাহিমা কানিজ লাভা